একবার একটি সাক্ষাৎকারে ঠিক এই প্রশ্নটিই করা হয়েছিল ‘কোকিল কন্ঠী’ বলে খ্যাত লতা মঙ্গেশকরকে। কী এই কন্ঠস্বরের রহস্য? ঐশ্বরিক ক্ষমতা! নাকি নিজস্ব অনুশীলন? ব্যাপারটা এমন, যেন খোদ ঈশ্বরকে কেউ জিজ্ঞেস করছে তাঁর মাহাত্ম্যের রহস্য কী? শিল্পী লতা মঙ্গেশকর বিনয়ের সাথে হেসে জানিয়েছিলেন, “কিছুটা প্রকৃতির দান। কিছুটা অনুশীলন।”
প্রকৃতির এই দানকে কেউ যদি ‘ঈশ্বরের দান’ মনে করেন তাতে ক্ষতি নেই। কেননা প্রকৃতিও ‘পুরুষ’ অর্থাৎ ঈশ্বরের মতোই রহস্যময়ী। আর এই রহস্যকেই বরাবর আবিষ্কার করতে চেয়েছে বিজ্ঞান। সেকারণেই লতাজি মারা যাবার পর তাঁর কণ্ঠ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। যদিও এখন সাধারণভাবে সুমিষ্ট কন্ঠস্বরের রহস্য অনেকটাই ভেদ করতে পেরেছে বিজ্ঞান। তাই প্রকৃতি বা ঈশ্বরের দানের পাশাপাশি বিজ্ঞান কী বলছে সেটাও জেনে নিতে দোষ নেই।
সাম্প্রতিক সময়েই ভয়েস সেন্টার-এর পরিচালক স্টিভেন গিটেলস এই মিষ্টি সুরেলা কন্ঠস্বর নিয়ে নিজের মতপ্রকাশ করেছেন। মূলত ভোকাল মাসল (Vocal Muscle)-কেই কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি। এই মাসল অর্থাৎ মাংসপেশী ল্যারিঙ্কস (Larinx)এর সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ল্যারিঙ্কসকে ভোকাল ফোল্ডার বা ভোকাল বক্স বলা হয়ে থাকে, যেটি বিপরীতমুখী V অক্ষরের মতো ঝুলে থাকে কন্ঠনালীর ভিতরে। এখানেই সুর বা শব্দের উৎপত্তি ও সঞ্চয়ের রহস্য লুকিয়ে — বলছে বিজ্ঞান।
ভোক্যাল বক্সটিকে ঘিরে রাখে একটি পাতলা আস্তরণ বা মেমব্রেন। সশব্দে মাংসপেশী সঞ্চালনের সময় যার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়। এই কম্পন যত বেশি ততই মিষ্টি হয় নির্গত কন্ঠস্বর। গায়ক বা গায়িকারা যে অনুশীলন করেন, তাতে ক্রমাগত এই কম্পনের (Vibration) ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হ্যাঁ, এর সাথে অবশ্যই বলতে হয় সুস্থ সুন্দর একটি ফুসফুসের কথা। ফুসফুসকে ঠিকঠাক রাখা তাই একান্ত জরুরি। এর সাথে কি রয়েছে নিয়মপালনের কোনও সম্পর্ক? লতাজির নিজের কথাতেই তার উত্তর ধরা আছে।
তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, গলা ঠিক রাখতে কোনও নিয়ম পালন করেন কিনা, তিনি জানান, “করতে হয়। ঠান্ডা না লাগানো, অতিরিক্ত টক বা আচার খাওয়া এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। যদিও আমি এসব কিছুই পালন করিনা।” বলেই হেসে ফেলেন। এ হাসিতে হয়তো অন্য রহস্য আছে! কিছু রহস্য রহস্যই থাক।