আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যের সাথে প্রযুক্তির এ যেন আশ্চর্য সংমিশ্রণ। এবারের গঙ্গাসাগর মেলায় তারই নমুনা দেখতে পাওয়া গেল। করোনা বিধি সম্পূর্ণ মেনে পালিত হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। বাংলা তো বটেই, রাজস্থান- উত্তরপ্রদেশ সমস্ত রাজ্য থেকেই এ মেলায় ফি-বছর প্রচুর জনসমাগম হয়। আর তাই কোভিড নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সার্বিক স্বার্থ মেনে মেলা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। হাইকোর্ট এতে সম্মতি জানায়। অবশ্যই করোনা সম্পর্কে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলেই খবর সূত্রে জানা যাচ্ছে। এমনকি এই বিধি বজায় রাখতেই গঙ্গাসাগর মেলায় ব্যবহার করা হয়েছে ই-স্নান, ড্রোন প্রভৃতির ব্যবস্থা।
প্রথমত, যাত্রীসাধারণের বাস ও ভেসেলের টিকিট কাটার ভিড় এড়াতে গঙ্গাসাগরের জন্য একটি মাত্র যাওয়া-আসার টিকিটের বন্দোবস্ত করা হয়। বারবার টিকিটের লাইনে না দাঁড়িয়ে একেবারেই যাওয়া আসার সমস্ত পরিবহনের ভাড়াই মিটিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। টিকিটের দাম হাওড়া থেকে নির্ধারিত হয়েছে ২১০ টাকা, আর বাবুঘাট থেকে ২০০ টাকা।
এবছর মেলায় প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ও আরটিপিসিআর রিপোর্ট। দুটি ভ্যাক্সিনের ডোজ নেওয়া প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আবশ্যিক। সমুদ্র তীরে ৫০ জনের বেশি লোকের জমায়েত যাতে না হয়, সে ব্যাপারে চলছে কড়া পাহারা। এছাড়াও রয়েছে ই-স্নানের ব্যবস্থা। এখানে কাউন্টারে পূণ্যার্থীদের জন্য পাত্রে করে ধরা থাকছে পবিত্র খাঁটি গঙ্গাজল। সেই জল সংগ্রহ করে যেকেউ আলাদাভাবে পূর্ণ বিশ্বাসসহকারে গঙ্গাস্নান করতে পারেন। তবে এবার সবচাইতে যেটা নজর কেড়েছে, তা হল — ড্রোনের মাধ্যমে গঙ্গাস্নান।
গঙ্গাসাগর মেলায় উন্নত প্রযুক্তিগত ড্রোনের ব্যবহার সত্যিই অভিনব। এক একটি ড্রোন ১৫ লিটার গঙ্গাজল বহন করে উড়ে যেতে সমর্থ। এই পদ্ধতিতে স্নান করতে আগ্রহীদের দূরত্ব বজায় রেখে লাইন দিয়ে দাঁড় করানো হচ্ছে। মাথার ওপরে উড়ে বেড়াচ্ছে ড্রোন। আধুনিক কালের ভগীরথ যেন! আকাশপথে নামিয়ে আনছে গঙ্গাকে! ওপর থেকে অঝোরে বর্ষিত গঙ্গাজলের ধারায় স্নান সেরে নিচ্ছেন পূণ্যার্থীরা। এই ব্যবস্থায় রীতিমতো উচ্ছ্বসিত তাঁরা! পূণ্য অর্জনের সাথে এমন চমৎকারি অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ তাঁরা এই প্রথম পেলেন যে!