অদম্য জেদ আর মনের জোর থাকলে কী না হয়! প্রায় অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখাচ্ছে মালদা জেলার মেয়ে ঋদ্ধিমা পাল। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ঋদ্ধিমা। মেরুদন্ড বেঁকে গিয়েছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা মেয়েটি। বাঁকা মেরুদন্ড চাপসৃষ্টি করছে ফুসফুসে। ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত স্নায়ু শুকিয়ে যাচ্ছে। পেশিতে প্রোটিন পৌঁছতে পারেনা বলে হাতের জোর খুবই কম। দেহ সোজা রাখতে হুইলচেয়ারের সাথে বেল্ট বেঁধে রাখতে হয়। জিনগত কঠিন অসুখে ভুগছে ঋদ্ধিমা পাল। এ রোগের নাম ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি টাইপ-২’। তবে এই কঠিন অসুখকে হার মানিয়ে দিচ্ছে মেয়েটির দৃঢ় মানসিকতা।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন ঋদ্ধিমার। মেধাবী ছাত্রীর সামনে বিরাট প্রতিকূলতা নিজেরই শারীরিক রোগ। তবে মনের জোরই শেষ কথা বলে, প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর ঋদ্ধিমা পাল। তার এই দৃঢ় প্রত্যয় দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। চিন্তামনি হাইস্কুলের আলাদা একটি ঘরে আলাদা একজন পরীক্ষকের ব্যবস্থা করা হয়েছে এই ছাত্রীর জন্য। স্পেশ্যাল ব্যবস্থা বলতে এইটুকুই –পরীক্ষক মেয়েটির খাতায় রুল টেনে দেবেন, সময়মতো পাতা উল্টে দেবেন আর বাড়তি সময় পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এছাড়া নিজের লিখিত পরীক্ষা নিজে হাতেই সম্পন্ন করবে পণ করেছে ঋদ্ধিমা।
মালদা গার্লস স্কুলের ছাত্রী ঋদ্ধিমা ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠতে তৃতীয় হয়েছে। এরপর করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতি। তবে এই সময়টার সদ্ব্যবহার করে পরীক্ষার জন্য অনলাইন ক্লাস আর পড়াশোনা করে ভালোমতই প্রস্তুতি নিয়েছে মেধাবী ছাত্রী। এবার অফলাইন পরীক্ষায় বসতে পেরে বেজায় খুশি। ঋদ্ধিমার সাহস প্রত্যয় আর মানসিক দৃঢ়তা অবাক করেছে শিক্ষক ও পরিবারের সকলকে। যাতায়াতের সুবিধার্থে পরীক্ষা কেন্দ্রের খুব কাছেই কয়েকদিনের জন্য ঘরভাড়া নিয়েছেন ছাত্রীর বাবা-মা।আর পরীক্ষকরাও স্যালুট জানিয়েছেন ঋদ্ধিমাকে।