বনগাঁর অতি সাধারণ এক চায়ের দোকানি অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা যেমন অভিনব তেমনই প্রশংসনীয়। নিজের দোকানের নোটিশ বোর্ড এবং একটি ঝুড়িতে প্রতিদিন কেক, বিস্কুট , লেবু প্রভৃতি খাবার রাখেন। রয়েছে ব্যবহারের জন্য মাস্কও। আর এর জন্য কোনও পয়সা লাগবেনা। দোকান চালানোর পাশাপাশি দুঃস্থদের জন্য এই পরিষেবা দিয়ে আসছেন সম্পূর্ণ নিখরচায়।
বনগাঁর পশ্চিম পাড়ার চম্পক সরণী মোড়। সেখানেই সুব্রত নাথের এই দোকান। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী প্রিয়া নাথ দুজনে মিলে দোকান চালান। সুব্রতবাবুর এই দোকান ১৫ বছরের পুরোনো। আগে স্ত্রী প্রিয়া একাই চালাতেন, লকডাউনে কাজ চলে যাওয়ার পর সুব্রত নাথও স্ত্রীর সাথে দোকানেই থাকছেন। ‘খুশির ঝুড়ি’-র ভাবনাটা অবশ্য প্রিয়ার মাথাতেই আসে। সুব্রত বাবু বলেছেন, “আমার স্ত্রী প্রিয়া একটা সময়ে খুবই অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটিয়েছে। সেকারনে এর জ্বালাযন্ত্রণা ওকে পীড়া দেয়। তাই এমন উদ্যোগ।”
দোকানের সামনের ঝুড়িতেই রয়েছে হরেকরকম খাবার। পথচলতি অসহায় ভবঘুরে ক্ষুধার্ত মানুষজন তো বটেই, এছাড়াও ঠেলাওয়ালা, ভ্যানচালক দোকানে চা খেতে এলে ওই ঝুড়ি থেকে পছন্দমতো বিস্কুট বা কেক তুলে খান। এর জন্য কোনও পয়সা লাগেনা। ফ্লেক্সব্যানারে বড় বড় হরফে লেখাও রয়েছে –‘খুশির ঝুড়ি। অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষ এই ঝুড়ি থেকে খাবার নিতে পারবেন।’ এছাড়া আরো একটি ঘোষণা রয়েছে বিজ্ঞপ্তির শেষে– ‘আপনি চাইলে এই দোকান থেকে খাবার কিনে ঝুড়িতে রাখতে পারেন।’
অর্থাৎ কেউ যদি অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষকে সেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তিনিও এই প্রয়াসে অংশ নিতে পারবেন। ‘খুশির ঝুড়ি’ বিফলে যাবেনা।
সুব্রত বাবু বলেছেন, “অভাবী ক্ষুধার্ত মানুষ যখন সামান্য কিছু খেয়ে খুশি হন, তখন তাঁদের চোখ দেখে বড় তৃপ্তি পাই। তাই এই ঝুড়ির নাম দিয়েছি ‘খুশির ঝুড়ি।”
বনগাঁর এই স্বামী-স্ত্রীর অভিনব সামাজিক উদ্যোগ ইতিমধ্যেই প্রচুর মানুষের নজর কেড়েছে। এলাকার এক অধিবাসী কিশোর ঘোষ জানান, “আমাদের এলাকায় এমন অভিনব উদ্যোগ দেখে আমরা গর্ব অনুভব করি।”