‘দ্য ডার্কনাইট’ চলচ্চিত্রের সেই হসপিটালের দৃশ্যটা মনে পড়ছে! যেখানে রাষ্ট্রকর্তার প্রতীকী চরিত্র হার্ভি ডেন্টকে টু-ফেস অর্থাৎ ভিলেন বানিয়ে ভীষণ হাসছে –জোকার। বিশ্ববাসীর চোখে এই মূহুর্তে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের অবস্থা এখন অনেকটা তাই। নায়ক থেকে রাতারাতি ভিলেন হয়ে গিয়েছেন তিনি। সন্দেহজনক দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হচ্ছে তাঁকে। বিশেষ করে ইউক্রেনে ভারতীয় ছাত্রদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিভৎস চেহারা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সহানুভূতি হারাচ্ছে ইউক্রেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ভারতীয় পড়ুয়াদের সুরক্ষার বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও গতরাত থেকে ইউক্রেনের উল্টো ছবি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। অসংখ্য পড়ুয়া সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওর মাধ্যমে লাগাতার বার্তা দিতে থাকেন তাঁদের ওপর সেনাবাহিনীর অকথ্য অত্যাচার চলছে। তাদের ফোন ভেঙে ফেলা হচ্ছে, লাঠিপেটা করা হচ্ছে, ফায়ারিং করে ভয় দেখানো হচ্ছে। এমনকি মেয়েদের চুলের মুঠি ধরে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন দাবিও করেছেন ছাত্রছাত্রীরা।
এই অবস্থাতেই ইউক্রেন রাষ্ট্রদূত একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, “ভারত আমাদের সমর্থন না করলে আমরাই বা কেন সাহায্য করবো!” এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে গণমাধ্যম। প্রশ্ন উঠেছে ভারতের ইউক্রেনকে সমর্থন করা উচিত কিনা। এই মূহুর্তে ভারতের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বলছেন — না, ইউক্রেনকে আর কোনও সমর্থন নয়।
দেখা যাচ্ছে যেসমস্ত ভারতীয়রা সাম্প্রতিক যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে ছিলেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর আচরণের ফলে তারাও এবার রাশিয়াকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন। জাতীয় যোদ্ধা হিসেবে আত্মপ্রচারের জন্যেই কি আত্মসমর্পণ না করে যুদ্ধপ্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি? এই জিজ্ঞাসা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে একাংশের মনে। বিশেষত ‘ডন-বাস রিজিওন দখলের’ যে লড়াই চলছে, সেই রাশিয়ান বংশোদ্ভুত নাগরিকরাও যেখানে মনেপ্রাণে চান রাশিয়ার সাথেই মিলিত হতে, সেখানে জেলেনস্কি এতবড় ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষকেই পক্ষান্তরে বিপদে ফেলেছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহলের একাংশ।
এদিকে গতকাল রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আদৌ কিয়েভে নেই, তিনি অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন। যুদ্ধে নিজের ভূমিকার যে ছবি বা ভিডিও তিনি তুলে ধরছেন সেগুলি পুরোনো!

এই বার্তায় ইউক্রেনের মানুষজনের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যদিও এরপর ট্যুইটারে জেলেনস্কি জানিয়েছেন রাশিয়ার এই প্রচার ভিত্তীহীন। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাননি। তবে ইউক্রেনে অবস্থিত ভারতীয় ছাত্রদের নির্যাতন কেন করা হচ্ছে সেসম্পর্কে কোনও বক্তব্য তাঁর কাছ থেকে এখনও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পাশাপাশি ভারতের পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে পড়ুয়াদের ফেরানোর প্রক্রিয়া জারি রয়েছে এমনটাই জানা গিয়েছে। তারই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া বার্তা ভারতের জনসাধারণকে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রীতিমতো বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিশ্ববাসী।