বাংলা স্বর্ণযুগের প্লেব্যাক সঙ্গীত জগতে অদ্বিতীয়া এক নাম হয়ে উঠেছিলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সুচিত্রার লিপ মানেই সন্ধ্যার গানের কলি — চিরকালের অবিনশ্বর প্রিলিউড হয়ে থেকে গেল। হেমন্ত-সন্ধ্যা জুটি একটা গোটা যুগের সাংগীতিক রোম্যান্টিকতার রসদ যুগিয়েছে বাংলা ছবির দর্শকদের মনে। যদিও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে রীতিমতোই পারদর্শী ছিলেন গায়িকা। নিয়মিত চর্চাও করতেন। বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতেও প্লেব্যাক সংগীত গেয়েছেন অজস্র।
দক্ষিণ কলকাতার বুকেই ১৯৩১ সালে জন্ম নিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। শাস্ত্রীয় সংগীতে দীর্ঘদিন তালিম নেওয়ার পর ‘অঞ্জনগড়’ চলচ্চিত্রে প্রথম কন্ঠদান দিয়ে ফিল্মে প্লেব্যাক শুরু। এরপর জয়জয়ন্তী, সপ্তপদী, নিশিপদ্ম সহ অসংখ্য ছবিতে সুপারহিট বাংলা গান গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শুধুই এপার বাংলা নয়, ওপার বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশেও জনপ্রিয় ছিলেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাস্তুহারাদের জন্য অর্থ তহবিল তৈরিতে সক্রিয় অংশ নেন। বাংলাদেশের বেতারকেন্দ্রের জন্য দেশাত্মবোধক সংগীত, শেখ মুজিবুর রহমানের জেলমুক্তিতে উৎসর্গীকৃত ‘বঙ্গবন্ধু তুমি এলে’ গানটিও তাঁরই গাওয়া। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম উদযাপিত ভাষাদিবস ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমন্ত্রিত শিল্পিদের মধ্যে ভারত থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বাংলার গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়াও পেয়েছেন ‘ভারত নির্মাণ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।’ মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা ‘পদ্মভূষণ’ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, কিন্তু গায়িকা এই অ্যাওয়ার্ড প্রত্যাখ্যান করেন।
২৭ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। করোনা আক্রান্ত হলেও শেষমেশ করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে ৯০ উর্ধ্ব বয়স্ক এই শিল্পীর শারীরিক অবস্থা ভীষণই ভেঙে পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্বাবধানে তাঁকে এসএসকেএম থেকে অ্যাপোলো তে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত সকলের সব চেষ্টাকে ফাঁকি দিয়ে আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।