চলচ্চিত্র জগতের মানুষজন রাজনীতিতে এসেছেন এই ট্রেন্ড হলিউড থেকে টলিউড এমনকি দক্ষিণী ছবিতেও রয়েছে, তবে সিনেমার সাথে রাজনীতির সরাসরি কানেকশন! সাম্প্রতিক উদাহরণ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’।
গত কয়েকদিনে অন্তর্জাল মাধ্যম ছেয়ে ফেলেছে এই ছবিটিকে ঘিরে আলোচনা ও প্রতি-আলোচনা। সূচনাটা অবশ্যই করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এবং ছবির গোটা ইউনিট যে বিজেপি শিবিরের বিপুল পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে তাতে আর সংশয় নেই। একই সঙ্গে বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির দাবি কাশ্মীর ফাইলস-এর মতো গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশের মতো ঘটনা নিয়েও চলচ্চিত্র হোক! এর মধ্যে বিজেপি শিবিরের প্রতি শ্লেষ একেবারে স্পষ্ট। কিন্তু কারা করলেন এইসব দাবি? জেনে নেওয়া যাক।
চলচ্চিত্র পরিচালক বিনোদ কাপরি গুজরাত নিয়ে সিনেমা ‘দ্য গুজরাট ফাইলস’ বানাতে আগ্রহী। কাশ্মীর ফাইলস-এর একফোঁটাও সমালোচনা না করে সরাসরি নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করে ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, “এই গুজরাট ফাইলস ছবিতে আপনার আসল ভূমিকা কী ছিল সেটা তুলে ধরব। যা ঘটেছিল তাই দেখাব। আপনি কি এই ছবি সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে দেবেন?”
প্রধানমন্ত্রীকে মিষ্টিভাষায় চ্যালেঞ্জ ঠুকে বিনোদ কাপরি আরো জানান, “আমার এই ছবি তৈরির জন্য বেশ কয়েকজন প্রোডিউসার রাজিও আছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে গুজরাট ফাইলস মুক্তি পেতেও অসুবিধা হবেনা বলেই আশা রাখি!”
আটদিনে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দেখছেন কয়েকজন। বিষছোবলের এই প্রয়াসকে শিল্প বলতে নারাজ স্বয়ং কাশ্মীরি পন্ডিত সৌম্যা লাখানি সহ কাশ্মীরের বেশকিছু বাসিন্দা। তেমনই, কাশ্মীর কেন্দ্রিক হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের নির্লজ্জ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাকে কটাক্ষবাণে বিদ্ধ করেছেন কেউ কেউ। টলিউড সিনেমার পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি চাই বিবেক এই ধরনের আরও ছবি তৈরি করুন। পরের বিষয় হোক উন্নাও বা হাথরাসের ঘটনা।”
চুপ করে বসে নেই রাজনৈতিক নেতানেত্রীরাও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন কাশ্মীর ফাইলস-কে বিজেপির প্রচারমূলক ষড়যন্ত্র বলে ইঙ্গিত করেছেন, তেমনই সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীকে লখিমপুর খেরির ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি চান লখিমপুর খেরির কৃষক নিধন নিয়েও সিনেমা হোক।
গত বুধবার সীতাপুরে অনুষ্ঠিত এক সভামঞ্চে অখিলেশ যাদব বলেন, “সীতাপুর হলো লখিমপুর খেরির প্রতিবেশী জেলা। যদি কাশ্মীর নিয়ে সিনেমা বানানো হয়, তাহলে লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়েও সিনেমা বানানো যেতেই পারে।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আন্দোলনরত কৃষকদের ৪জন এবং ১জন সাংবাদিক নিহত হন। সেই ছবির বাস্তবতাকেই সিনেমায় তুলে আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন অখিলেশ যাদব। আর গুজরাতের দাঙ্গা বা হাথরাসের মতো ঘটনা এখনও কেন চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছেনা! সেই প্রশ্নই তুলছেন বিশিষ্টমহল।