হিরো আলম মানেই হাস্যরসের ভরপুর খোরাক। বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় ইউটিউবার স্বনামেই বিখ্যাত। তবে এই খ্যাতি প্রচলিত অর্থে কোনও শিল্পচর্চার প্রতিদানে নয়। হিরো আলমের পরিচিতি ছড়ায় যাঁরা নেটদুনিয়ায় ট্রোল করেন তাঁদের মাধ্যমে। এমনকি বাংলাদেশের শিল্পী মহলেও ব্রাত্য তিনি। সেকারণে টলিউডে কাজ করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করে পর্যন্ত ট্রোলিংয়ের শিকার হন!
আসলে এই মানুষটি যখনই যাকিছু করেন, সাথে সাথে সেটা হাস্যকর হয়ে ওঠে। ঝিনচ্যাক পোশাক পরে হিরোর কায়দায় নাচাই হোক বা বিখ্যাত শিল্পিদের ঢঙে গাওয়া গানে, চেহারা থেকে মুখভঙ্গী সবেতেই যেন ‘হিরো’ ইমেজের মূর্তিমান ব্যঙ্গ! স্ক্রিনে হিরো আলমের অ্যাপিয়ারেন্স মানেই চলমান হাস্যব্যক্তিত্ব। কিন্তু কজনই বা জানেন তাঁর সম্পূর্ণ নাম, পরিচয়, ইউটিউবারের নেপথ্যের জীবন! সেটা জানাতেই কলম তুলে নিয়েছেন তিনি। জানাচ্ছেন অজানা কথা। যা জানলে হয়তো হিরো আলম সম্পর্কে ধারণা বদলে যেতে পারে! হিরো আলমের কলম চুুঁয়ে ঝরে পড়ল অভিমান।
আসল নাম আশরাফুল আলম। তিনি আত্মজীবনী লিখে বই প্রকাশ করছেন। বইয়ের শিরোনাম — ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, আমরা সমাজকে বদলে দেবো।’ সাবটাইটেলে ব্র্যাকেট দিয়ে লেখা “বিখ্যাত হতে আসিনি, শুধু দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চেয়েছি।” এই বইটি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। উন্মোচিত হচ্ছে অন্য এক হিরো আলমের দিক। এই বই যে অনেক হেরে যাওয়া মানুষকেও উদ্দীপনা যোগাবে, অনেকেই সেটা মনে করছেন। হিরো আলমের কথা অনুযায়ী, “আমার বই কেউ কিনবে কি না কিনবে সেটা বড় কথা নয়, তবে আমি সকলকে অনুরোধ করব একবার হলেও বইটি পড়া উচিত। আমাকে নিয়ে সবাই অনেক হাসি ঠাট্টা ট্রল করেন, কিন্তু পর্দার ওপারের হিরো আলমকে কয়জন চেনেন?”
হিরো আলম আরো জানান, “পর্দার পেছনের আমাকে জানলে হয়তো আমাকে নিয়ে আপনারা ট্রল করতেননা, বরং উৎসাহ দিতেন।”
বইয়ের ভিতরকার বেশকিছু উক্তি ছড়িয়েছে নেটমাধ্যমে, যে উক্তিগুলো অনেক মানুষকেই স্পর্শ করে যাচ্ছে। এমনকি তাঁকে নিয়ে যারা ট্রোল করেন বা তাঁর হেটার্স, তাঁরাও মনোযোগ দিচ্ছেন হিরো আলমের প্রতি। নিজের বইটিতে নিজের কষ্টকর জীবনের কথা, ‘চানাচুর বিক্রী করে, পথে ঘাটে মার খেয়ে’ বেঁচে থাকা আশরাফুল আলম যেমন রয়েছেন, তেমনই সেই হিরো আলম কথা বলছেন স্ট্রেটকাট – ‘আমি মাইনষের হাসিমুখ দেখতে ভালো লাগে বলেই ভিডিও করি। লোকে হাসবে সেইজন্যেই কাজ করি। ভাইরাল সমালোচনা এইসবের জন্য নয়।’ হিরো আলম জানান, ‘আমি সকল বিধবা মা, পরিত্যক্ত নারী ও শিশুদের জন্য একটি সংস্থা করে যেতে চাই যাতে, আমার মায়ের মতো কারো মায়ের যেন মার খেয়ে রাস্তায় বাচ্চা নিয়ে রাত কাটানো না লাগে।’
বইটি কেউ পড়বেন কিনা, একটা জোক সত্যিই প্র্যাকটিক্যাল জোক হয়ে গোটা সমাজকেই ব্যঙ্গ করে উঠবে কিনা সেটা আশরাফুল আলমের কথাতেই বলা হচ্ছে –‘আমি হিরো আলম হয়তো একদিন মারা যাবো, আমার লেখা বইটি থেকে যাবে, একদিন আমার লেখাগুলো আপনাদের কাঁদাবে, কথা দিলাম…’