বসন্ত পঞ্চমী, এই তিথিতেই পূজিত হন বাগদেবী স্বরস্বতী। আজকাল অবশ্য সরস্বতী পূজোকেই বাঙালীর ভ্যালেনটাইন’স ডে হিসেবে অনেকে তুলনা দিয়ে থাকেন। ঘটনাচক্রে তাই, এটা উড়িয়ে দেওয়া যায়না। শাড়ি পরা তরুণীটির ওপর পাঞ্জাবি পরা তরুনের হৃদয়ে লাবডুব বেড়ে গিয়ে ‘লাভে ডুব’ দেওয়ার অসংখ্য ঘটনাই এদিন ঘটে থাকে।

এর একটা স্পষ্ট কারণ হল — বয়েজ এবং গার্লস স্কুলের ব্যবধান এদিন ভেঙে যায়, পছন্দের ছেলেটি এবয়ং মেয়েটি এইদিন সহজেই পরস্পরের সান্নিধ্যে আসতে পারে। এখন কথা হলো, এই যে দেবীর আরাধনার দিনে এমন মনের মিলন ঘটে সেই দেবীর উৎস সম্পর্কে জানলে আমরা আরো অবাক হবো, অনেকেই এই কাহিনী জানলে প্রেমে পড়ার দিনটির সাথে তাঁর যোগসূত্রও অনায়াসে খুঁজে বের করতে পারেন।
স্কন্দ পুরাণে ঘটনাটি বর্ণিত। সেই বর্ণনা অনুযায়ী — সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা যখন এই জগত সৃষ্টি করলেন, নিজে কিছুতেই তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেননা। তখন তিনি ধ্যানে বসে জগতের সমস্ত ভালো দিক এবং ভালো গুণ একত্রিত করতে থাকেন, আর এই গুণের সমাহারেই এক দেবীমূর্তি ব্রহ্মার মুখের গহ্বর থেকে বেরিয়ে আবির্ভূত হয়, এই দেবীই হলেন সরস্বতী। যিনি ব্রহ্মাকে তাঁর সৃষ্ট জগত সংশোধন করতে সাহায্য করেছিলেন। এই সূত্র ধরে অনেকেই বলতে পারেন — দেবী সরস্বতীই হলেন সৃষ্ট জগতের Balance Factor.
তিনি ‘বাক’ অর্থাৎ ভাষার দেবী, সুর ও সঙ্গীতের দেবী এবং বাক্য দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান অর্থাৎ ‘বিদ্যার’ দেবী। যেহেতু ব্রহ্মার অংশ থেকেই জন্ম তাই তাঁকে ব্রহ্মার কন্যা ধরে নেওয়া হয়েছে। সেই অর্থে তিনি ব্রহ্মার কন্যা হলেও, নিজের সৃষ্ট এই দেবীর রূপেগুণে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে কামনা করে বসেছিলেন ব্রহ্মা।
এই দেবীকে চতুর্দিক থেকে লক্ষ্য করার জন্যই ব্রহ্মার চারটি মুখের সৃষ্টি হয়। তাই একদিকে যেমন ব্রহ্মার ‘মানস কন্যা’ সরস্বতী, তেমনই অন্য অর্থে সৃষ্টিকর্তার ‘মানসী’। স্রষ্টার নিজের সৃষ্টির প্রতি যে ভালোবাসা, তারই মূর্ত রূপ হলেন সরস্বতী। এইভাবে বিষয়টিকে দেখাই যায়!