VoiceBharat News 1646975906 main 9 2

“বিদেশের মাটিতে তো পাকিস্তান আর ভারতীয়ের মধ্যে কোনও সীমান্ত নেই!” এই কথা যিনি অবলীলায় বলতে পারলেন তিনি মোয়াজ্জেম খান। যিনি শয়ে শয়ে ভারতীয় পড়ুয়াদের ইউক্রেনের বর্ডার পেরোতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সকল পড়ুয়া ভাইবোনদের কাছে আজ তিনি ‘খান ভাই’ বলে পরিচিত।

VoiceBharat News 1646975953 inside 2

তিনি জানান, “আমি নিজে ভারতীয় শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছি। কিছু ঘটনা ভারত আর পাকিস্তানকে আলাদা করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকলে হবেনা।”
ইতিহাস নিয়ে পড়ে নেই বলেই হয়তো তিনি ইতিহাস গড়ার মতোই পদক্ষেপ নিয়েছেন। একদিকে যখন মোয়াজ্জেমের পরিবারের লোকজন ইউক্রেনের সুমিতে বিপদের অগ্নিগর্ভে বাঁচার চেষ্টায় রত, সেই সময়েই মোয়াজ্জেম খান একদল ভারতীয় পড়ুয়ার ফ্লাইট মিস হয়ে যাওয়ার খবর পান। যুদ্ধ শুরুর আগের দিনের ঘটনা। ২৮ বছরের মোয়াজ্জেম নিজেই জানিয়েছেন, ওইদিন গাড়ি আর হোটেলের বন্দোবস্তের চেষ্টায় অর্ধেক শহরের ঘুম ভাঙিয়ে ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু এতজনের গাড়ির ব্যবস্থা কীভাবে করা সম্ভব!

পর্যটনের ব্যবসা মোয়াজ্জেমের। আর কোনও উপায় না দেখে নিজের বাস ট্যাক্সি যা ছিল সমস্ত বার করে নিরাপদে ভারতীয় পড়ুয়াদের ইউক্রেনের সীমান্ত পার করে দেন। মোয়াজ্জেম খান জানাচ্ছেন, “পরেরদিন থেকেই রুশ আগ্রাসন শুরু হয়ে যায়। ওইদিন আমার দাদা টর্নোপিল এসেছিল। হামলা শুরু হতেই ও বৌদেদের জন্য সুমির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।” এদিকে মোয়াজ্জেমের কাছে আসতে থাকে একের পর এত ফোন।

VoiceBharat News images 2022 03 12T132344.379

খানভাইয়ের ফোন নাম্বার তখন ত্রস্ত পড়ুয়াদের কাছে ‘হেল্পলাইন’ নম্বর হয়ে উঠেছে। ফিরে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়াড়াই উদ্ধারকর্তা খান ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে দিয়েছে সকলকে। জনে জনে ছড়িয়ে পড়েছে ‘মসীহা’-র ফোন নম্বর। মোয়াজ্জেম প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “দিনরাত গাড়ির জন্য ফোন আসতে থাকে। যাঁরা গাড়ি পাচ্ছিলেননা, তাঁদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও করতে থাকি। সেই অসময়ে ১৮-১৯ বছরের ভাইবোনদের বিপদের মুখে একা ছেড়ে দেবো কোন বিবেকে?”

VoiceBharat News 1646975906 main 9
মোয়াজ্জেম খানের এই বক্তব্য শুনে সাহিত্য পড়ুয়া বাঙালিদের অবশ্যই মনে পড়ে যাবে সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্পটির কথা। অবাঙালিরা সাদাত হাসান মান্টোর পাতা খুলে পড়ে নিতে পারেন ‘টোবাটেক সিং’। আজ যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেনে মোয়াজ্জেম নিজেই একটি অলিখিত ইতিহাস যোগ করলেন। প্রশ্ন তাঁকেও করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল –‘আপনি তো পাকিস্তানি! তাহলে?’ খানভাই উত্তর দিয়েছেন, “ওরা সবাই তো আমার ভাইবোন। ওদের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থাকে সাহায্য বলতে লজ্জা লাগছে। আমি পাকিস্তানি বলে কোনও ভারতীয়কে সাহায্য করবনা? তা কীকরে হয়?”

আর ভারতে ফেরা ভারতীয় পড়ুয়াদের মুখে মুখে ফিরছে খান ভাইয়ের নাম। ঝাড়খন্ডের মনমিত কুমারের মতে, “খান ভাই না থাকলে কী যে হত ঠিক নেই। সেই সময় ইউক্রেনে সবকিছুর জন্যই বেশি টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু বাসের জন্য আমাদের কাছ থেকে একটি টাকাও চাননি খানভাই।”

VoiceBharat News 1646975934 inside 1 1

মনমিতের মতোই ইউক্রেন ফেরত অসংখ্য পড়ুয়া খান ভাইয়ের কথা ভুলতে পারছেননা। হঠাৎ কোথা থেকে এসেছিলেন তিনি! যিনি অনায়াসে বলে দিতে পারেন, “বিদেশের মাটিতে তো আর ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত নেই!” উল্লেখ্য, বিদেশের মাটিতে ভারতীয় পড়ুয়াদের এই উদ্ধারকারী খান ভাইয়ের বৌদি তার ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে এখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত সুমিতে আটকে রয়েছেন। বম্বিংয়ে একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় যাওয়া আসার রাস্তা বিচ্ছিন্ন। সকলেই প্রার্থনা করছেন তাঁরা যেন সুরক্ষিত থাকেন।

By Partha Roy Chowdhury (কিঞ্জল রায়চৌধুরী)

Partha Roy Chowdhury (Bengali: কিঞ্জল রায়চৌধুরী) is staff journalist VoiceBharat News. email: kinjol@voicebharat.com