সিপিএমের কর্মী সম্মেলনে সঙ্ঘ পরিবারের শিক্ষা! শুনতে আপাত স্ববিরোধী মনে হলেও কমিউনিস্ট পার্টিতে বাস্তবে ঠিক সেটাই ঘটতে চলেছে।
সম্প্রতি কেরলের অনুষ্ঠিত সিপিআইএমের ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসে উঠে এল ‘সঙ্ঘ’ সম্পর্কিত শিক্ষার কথা। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় বামের ভোট ‘রামে’ ট্রান্সফারের ঘটনা এর আগে ঘটতে দেখা গিয়েছে। তাই বলে সরাসরি আরএসএস-র থেকে শিক্ষাগ্রহণ! হ্যাঁ, এবার এই বিষয়টির ওপরেই পার্টিকর্মী ও সংগঠকদের নির্দেশ দিলেন প্রকাশ কারাট। পার্টিক্লাসে ‘সঙ্ঘ পরিবারের’ জীবনযাপন নিয়ে চর্চার পরামর্শই দিচ্ছেন সিপিআইএমের উচ্চ নেতৃত্ব।
যদিও সিপিএম বিষয়টিকে আরএসএসের প্রতি অনুরাগ বলে দেখাতে রাজি নয়। কমিউনিস্ট পার্টির মতে, ভারতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ (BJP)-কে হারাতে হলে তাদের গোড়াঘর অর্থাৎ আরএসএস (RSS)-কে পরাজিত করতে হবে। আর ঠিক সেকারনেই জনমানসে তাদের প্রভাববিস্তার করার তত্ত্বটি বোঝা জরুরি, এমনটাই মনে করছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতৃত্ব।
নির্বাচন হলো বাইরের লড়াই। আসলে ‘সঙ্ঘ পরিবার’ যেভাবে সমাজের সর্বস্তরে মেলামেশা করে তাদের বুদ্ধি ও মগজকেও ব্যবহৃত করছে সেই অস্ত্র অর্থাৎ ‘ব্রেনওয়াশের’ থিওরিটিকে বোঝা জরুরি। তাই ‘সঙ্ঘ পরিবার’ থেকে শিক্ষনীয় বিষয়গুলি নিয়ে পার্টির অভ্যন্তরে কর্মীসংগঠকদের নিয়ে ক্লাস করার দিকে জোর দিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব।
আদতে এটা শিক্ষনীয় নাকি বিভ্রান্তি, সেটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে ‘কমিউন’ এবং ‘সঙ্ঘ’, দুটিকে এক করে দেখার প্রবণতা অনেক বামপন্থী তাত্ত্বিকদের মধ্যে আগে থেকেই সুপ্ত আকারে ছিল। কেউ কেউ এমন ধারণাও পোষণ করতেন ‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়াকে অনুকরণের আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই, কেননা ‘আশ্রম’ বা ‘সঙ্ঘ’ ভারতীয় সংস্কৃতিরই অঙ্গ। ‘কমিউন’ অর্থাৎ যৌথজীবনযাপন, একই আদর্শে ও চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে থাকার এই যে প্রক্রিয়া, একদিক থেকে দেখলে সঙ্ঘের সাথে অভিন্ন বলেই মনে হয়। সেইসঙ্গে ‘ইন্ডিভিজুয়াল’ অর্থাৎ ‘ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে’ও অঙ্কুরেই বিনাশ করা হয়। যে সংকটের কারণেই সোভিয়েত রাশিয়ার ‘সমাজতন্ত্রের’ পতন বলে একাংশ মনে করেন।
‘সঙ্ঘ পরিবার’-এর উদ্দেশ্য আর কমিউনিস্ট পার্টির ‘কমিউন’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য আদৌ এক কিনা বিষয়টি বিতর্কিত। তবে আসন্ন বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে ‘সঙ্ঘ পরিবার’-এর অস্ত্রেই নিজেদের অস্ত্র ঘষে শান দিতে চাইছে সিপিএম। ‘লোহা যেমন লোহাকে কাটে’ অনেকটা সেইরকম আর কি! তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গিয়ে শেষটায় লাল পতাকার রঙ ফেড হতে হতে গেরুয়া রঙেই পরিণত হয়ে যাবেনা তো? সেটা সময়ই বলে দেবে।