কিংবদন্তি সেই চরিত্র ‘জটায়ু’-র দেখা মিলল পার্লামেন্টে আচমকাই। যাঁকে দেখে প্রত্যেকেই সন্তোষ দত্তকে স্মরণ করছেন। আসলে বাঙালির নস্ট্যালজিয়ায় ফেলুদা সিরিজের ‘জটায়ু’ এবং অভিনেতা সন্তোষ দত্ত অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত হয়ে আছেন। চলচ্চিত্র প্রেমী মাত্রেই জানেন, সন্তোষ দত্ত মারা যাওয়ার পর সত্যজিৎ রায় আর ফেলুদা করতে চাননি। স্ক্রিপ্টে চরিত্র আঁকতেন সত্যজিৎ, তাই তাঁর তাঁর ‘জটায়ু’ ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলীর চরিত্রে আর কাউকে ভাবা প্রায় অসম্ভব ছিল। তবে পার্লামেন্টে আবির্ভূত এই রাজনীতিবিদ মানুষটিকে দেখলে নির্ঘাত তিনি আবার ফেলুদা করতে রাজি হতেন, এবং হরিশ দ্বিবেদীকে অবশ্যই পার্লামেন্ট ছেড়ে শ্যুটিংয়ে ছুটতে হত একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
তিনি উত্তরপ্রদেশের বস্তি নির্বাচনী কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ হরিশ দ্বিবেদী। বুধবার যখন পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন তিনি, জানতেননা তাঁকে নিয়ে বঙ্গদেশে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে! আলোচনার কারণ তাঁর চেহারার সাথে সন্তোষ দত্ত অভিনীত ‘জটায়ু’-র আশ্চর্য মিল!
হরিশ দ্বিবেদীকে স্বচক্ষে দেখার পর বাঙালি নেটিজেনদের মধ্যে তুমুল আলোচনা শুরু হয়ে যায়। নানাজন নানান মত প্রকাশ করতে থাকেন, কেউ বলেন ‘গড়পার ছেড়ে শেষপর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে!’ কারুর প্রশ্ন,’হরিশ কি ওনার ছদ্মনাম!’ কেউ আবার সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায়ের সাথে তাঁকে আলাপ করিয়ে দিতেও বলেছেন।
হরিশ দ্বিবেদী অবশ্য এতকিছু জানতেননা। তিনি পার্লামেন্টে অখিলেশ যাদব আর কংগ্রেসের তুলোধনা করছিলেন। পরে তাঁকে জানানো হলে তিনি রীতিমতো উচ্ছসিত হয়ে ওঠেন। সত্যজিৎ রায়ের নাম পরিচিত থাকলেও ফেলুদা তাঁর পড়া বা সিনেমাটিও দেখা ছিলনা। তিনি প্রথমে একটু অবাক হয়েই বলেন “তাই নাকি! আগে আমাকে কেউ তো এমন বলেনি! শুনে বেশ ভালোই লাগল। আগ্রহ রইল লালমোহন বাবু চরিত্রটির ছবি দেখার।”
ফেলুদা সিরিজের দুটি কাহিনী ‘সোনার কেল্লা’ ও ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ নিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এই ছবিদুটিতেই ‘জটায়ু’ চরিত্রে অমর হয়ে রয়েছেন সন্তোষ দত্ত। তিনি মারা যাবার পর হাজার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি ফেলুদা নিয়ে আর সিনেমা করেননি। এরপর সন্দীপ রায়ের নির্মিত ফেলুদায় রবি ঘোষ, অনুপ কুমার, বিভু ভট্টাচার্য জটায়ু করলেও আজও জটায়ু বললে বাঙালির চোখে সন্তোষ দত্তই ভেসে ওঠেন। এই রসায়ন দুর্লভ। আর তারই ছায়াপাত ঘটল বিজেপি নেতা হরিশ দ্বিবেদীর চেহারায়। যার ফলেই শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি।