সাতদিনেই বক্সঅফিস তোলপাড় করা সিনেমা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, যে সিনেমা সম্পর্কে উচ্ছসিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “এতদিন যে সত্য গোপন করে রাখা হয়েছিল, এই ছবিতে তা পরিস্কার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই ধরনের সিনেমার মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে পারেন।” সেই ছবিকেই নিছক ‘প্রচারমূলক’ বলে আখ্যায়িত করল কাশ্মীর উপত্যকার বাসিন্দারা!
বিবেক আগরওয়াল প্রযোজিত, এবং বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এইমূহুর্তের সমস্ত ভারতীয় ছবির রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। মাত্র ছ’দিনে ৬০ কোটি ব্যবসার পাশাপাশি ভারত সরকারের বিপুল সমর্থন লাভ করেছে এই ছবি।
মধ্যপ্রদেশ সরকার ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখতে উৎসাহিত করার জন্য পুলিশদের বিশেষ ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। তেমনই ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয় ছবিটির কর মকুব করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাদের জীবনযাত্রা ও পটভূমি নিয়ে এই ছবি আধারিত, সেই কাশ্মীরের বাসিন্দা ও পন্ডিত সম্প্রদায় যে মতামত দিলেন তা এইসময়ে অপ্রত্যাশিতই ছিল।
ভূমিকম্পের আফটার এফেক্টের মতোই বিপুল প্রচারের উল্টোদিকে এবার দ্য কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে আছড়ে পড়ল কাশ্মীর উপত্যকার এক বড় অংশের মানুষজনের তীব্র অসন্তোষ।
উল্লেখ্য, যে সময়টিকে কেন্দ্র করে বিবেক অগ্নিহোত্রীর এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে, সেই সময় অর্থাৎ ৯০ দশক থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় সিনেমা হল বন্ধ। এমনকি কোনও সিনেমা দেখতেও তাঁরা আগ্রহী নন। তবে সাম্প্রতিক আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই সিনেমা নিয়ে সেখানকার অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কাশ্মীর পন্ডিত সংঘর্ষ সমিতির এক সদস্য সঞ্জয় টিকু এক বৃহত্তর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “এই ছবি দেখিয়ে কিছু লোক রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। তাদের অঙ্গুলি সঞ্চালনেই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।”
পাশাপাশি কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আহমেদ ওয়ানি বলেছেন, “কাশ্মীরি পন্ডিতদের নিয়ে সিনেমা হয়েছে এটা তো খুব ভালো খবর। সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী গত ৩৩ বছরে প্রায় ২০০ জন কাশ্মীরি পন্ডিত সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন।” এরপরই তিনি চমকপ্রদ এক তথ্য দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, “২০১৬ সালে হিজবুল্লাহ কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যা করার পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে একশোরও বেশি মানুষ প্রাণ হারালো, এই ঘটনা নিয়েও তো সিনেমা হতে পারে।”
কাশ্মীর ফাইলস প্রসঙ্গে অধ্যাপক আহমেদ ওয়ানি সরাসরিই বলেন, “এই ছবিটাকে গেরুয়া শিবির তাদের নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগাবে এবং দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করবে।”
জনৈক কাশ্মীরি পন্ডিত যে মতামত রেখেছেন সেটা কাশ্মীর ফাইলসের সাফল্যকে মুখ থুবড়ে ফেলে দিতে পারে।
কাশ্মীরি পন্ডিত সোম্যা লাখানি বলেছেন, “এই সিনেমাটি শিল্প নয় প্রচার। শিল্প ও প্রচারের মধ্যে যে সূক্ষ্ম তফাৎ রয়েছে সেটা বোঝা অত্যন্ত জরুরি।” এই বক্তব্যের সাথেই সহমত পোষণ করার পাশাপাশি সিনেমায় ব্যবহৃত তথ্য নিয়েও জোরালো প্রশ্ন তুলেছেন কাশ্মীর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মহম্মদ শাকিব।
তাঁর মতে, “জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ডাকাতির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।” বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উল্লেখ করেছেন তিনি। অধ্যাপক শাকিব বলেছেন, “কথা বললেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জেলে ভরে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মৌলিক অধিকারগুলি এর ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে।” জানান তিনি।