মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। খবরটা ছড়ানোমাত্রই শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। গত চারদিন ধরে কার্যত যে নারকীয় গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল গোটা রাজ্য, এদিন সেই প্রতিবাদের ভাষাকেই মান্যতা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বগটুই গ্রামের দুর্ঘটনাস্থলে পদার্পন করেই স্বভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রথম সারির রাজনৈতিক নেত্রী।
রামপুরহাটের বগটুইতে বৃহস্পতিবার যা যা ঘটল, সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাসের পাতায় এই অধ্যায়টি লেখা থাকবে। গণমাধ্যমের প্রতিবাদ এবং নিরপেক্ষ বিচারের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সবিনয় নির্দেশ, জনসাধারণের আর্জি — প্রত্যেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন মমতা। রামপুরহাটে গিয়ে আলোচনার পরেই অনস্পট তৃণমূল নেতা আনিরুলকে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই অগ্নিকান্ডের মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনিরুলের উদ্দেশ্যে মমতা স্বকন্ঠে ঘোষণা করেন, “আমি চাই আনিরুল থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। নাহলে যেখান থেকে হোক তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।”
পাশাপাশি পুলিশকে নির্দেশ দেন , “এমন পদ্ধতিতে মামলা সাজান যাতে অভিযুক্তরা কোনওভাবেই ছাড় না পায়।” মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার কয়েকঘন্টার মধ্যেই অবিশ্বাস্য তৎপরতায় তৃণমূল নেতা আনিরুলকে হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ।
এর সাথে সাথেই বীরভূমের মানুষজন চাক্ষুষ দেখল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিভাবক হয়ে উঠলেন। এদিন জেলাশাসককে ডেকে সকলের সামনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, “যাঁদের বাড়ি পুড়ে গিয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে ঘর বানানোর জন্য ১ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ২ লাখ, কোনও কার্পণ্য করা চলবেনা।” বীরভূমের জেলাশাসকও সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দেন অবিলম্বে এই নির্দেশ পালিত হবে। এই অর্থ শুধু ঘর মেরামতের জন্য।
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ করে টাকা, আহত শিশুদের জন্য ৫০ হাজার, গুরুতর জখমদের চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। প্রকাশ্যে এই ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বিনীতভাবেই বলেন, “আমি জানি কোনও মৃত্যুর বিকল্প আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চাকরি দিয়ে হতে পারেনা। তবু প্রত্যেকটি পরিবারের একজনের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করবে রাজ্যসরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় এই চাকরি হবে। ইন্টারভিউ ছাড়াই প্রথমে ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়া হবে। একবছরের মধ্যেই তাদের গ্রুপ-ডি পদে স্থায়ী চাকরিতে বহাল করা হবে।”
এদিনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত রাখলেন। বগটুই গ্রামের নিরীহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা আশ্বাস তো পেয়েছেন অনেকটাই। পাশাপাশি শাসক-বিরোধী সমস্ত পক্ষের তাঁবেদাররাও চুপ মেরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা দেখে। বিরোধী দল বিজেপির অনেকেই যারা রাজ্যের প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলে সুযোগের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছিলেন, তাদের অনেকেই এইমূহুর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাই করছেন মনে মনে, সেটা মুখে হয়তো বলতে পারছেননা। ঘটনাক্রম সেইদিকেই ইঙ্গিত করছে।