ভারতের বর্তমান জাতীয় প্রেক্ষাপটে ইতিহাস মুছে ফেলা, ইতিহাসের বিকৃতি , প্রয়োজনে রঙ চড়িয়ে নতুন করে ইতিহাস লেখবার একটা জিগির উঠেছে। মেডিকেল শিক্ষাক্ষেত্রেও যে তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে, তারই প্রমাণ মেলে তামিলনাড়ুর মাদুরাই মেডিকেল কলেজে।
তামিলনাড়ুর এই কলেজে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য ‘হিপোক্রেটিক ওথ’-এর বদলে ‘চরক শপথ’ পাঠ করানো হয়, যা কার্যত নীতিবিরোধী। প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা শাস্ত্রে মহর্ষি চরকের দান অনস্বীকার্য একথা ঠিকই, তাই বলে এই যুগে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র ভারতের ঐতিহ্য রক্ষার অজুহাতে ওই সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ প্রশংসনীয় নয় এমনটাই বহু চিকিৎসাবিদ মনে করছেন। আর মাদুরাই মেডিকেল কলজে ঠিক সেটাই ঘটানো হয়েছে।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই কলেজের ডিনকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তামিলনাড়ুুর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম সুহ্মমণিয়ম বলেছেন, “এটা একেবারে অনুচিত কাজ। বহু কাল থেকে হিপোক্রেটিক শপথ নেওয়া হয়। কিন্তু সেটা এবার করা হয়নি। সেকারণেই ডঃ এ রাথিনাভেলকে পদ থেকে সরিয়ে ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়েছে।”
মেডিকেল এডুকেশনের পরিচালক নারায়ণ বাবুর বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক মেডিকেল কলেজের ডিনকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে–‘হিপোক্রেটিক শপথ মেনে চলতে হবে। শপথগ্রহণের প্রোটোকল কেউ ভাঙতে পারবেননা।”
তামিলনাড়ুর পূর্বতন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনবুমানি রামাদোসও ঘটনাটিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, হয়তো প্রাক্তন বলেই সেই বিস্ময় প্রকাশ করতে পেরেছেন। তিনি বলেছেন, “হিপোক্রেটিক শপথ রোগীদের মনোবল জাগানোর জন্য চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করে। এটি চিকিৎসকদের সৎ ও ক্ষমাশীল হওয়ার বিষয়ে শিক্ষা দেয়। উল্টোদিকে ভারতীয় আয়ুর্বেদ ব্যবস্থায় বলা হয়েছে যারা সম্রাটের বিরুদ্ধে তাদের চিকিৎসা কোরোনা! বিধবাদেরও চিকিৎসা না করার কথা বলা হয়েছে! সেরকম একটি ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি কোনও শপথ পাঠ করা ঠিক নয়।”
আপাতত শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের একটি অপপ্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে বলেই সচেতন মহলের একাংশ মনে করছেন। তবে শিক্ষার সর্বস্তরে এমন করেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর পরিকল্পনা কাজ করছে, এব্যাপারে তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন।