বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে মুকুল রায়ের ইস্যু এখন আর অজানা কিছু নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনে ভাইরাসের মতোই ছড়িয়ে পড়ছিল দলবদলের রোগ। যেই রোগে আক্রান্ত হয়ে তৃণমূল ছেড়ে আচমকাই বিজেপি শিবিরে যোগ দেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এই রোগের পর্যায়ে খানিকটা টিকাকরণের মতোই কাজ করেছিল বিধানসভা ভোটের ফলাফল, যার ফলে আবার দলে দলে সবাই তৃণমূল শিবিরে ফিরতে থাকেন। এর সূচনাটা করেছিলেন মুকুল রায়। তৃণমূলও স্বাগত জানায়। প্রতিষেধকের এই থিওরিটা অবশ্যই তৃণমূল দলের আত্মবিশ্বাসী মতামত, তবে বিজেপির মত ছিল, ‘এরা সব স্বার্থান্বেষী, ক্ষীর খাওয়া পাবলিক, বিদায় হলেই ভালো।’ কিন্তু গন্ডগোলটা পাকিয়েছিলেন মুকুল রায়। ক্রমাগত দলবদল-রূপী ভাইরাসের এক অদ্ভুত ‘মিউটেশন’ ঘটে গিয়েছিল তার মধ্যে। শেষমেষ তিনি নিজেই বুঝে উঠতে পারছিলেননা কোন দলে রয়েছেন!
একদিকে বিজেপির বিধায়ক পদ, পাশাপাশি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানের পদ — দুটোই ধরে রাখছিলেন। তৃণমূলে গিয়ে প্রকাশ্য সম্মেলনে মন্তব্য করে বসেছিলেন ‘বিজেপি এবার বিপুল ভোটে জিতবে!’ ভুল ধরিয়ে দলের নাম মনে করিয়ে দিতে গেলেও বলে ওঠেন, ‘ওই একই হলো, তৃণমূল বিজেপি সবই এক।’ কখনও আবার বলেছেন, ‘আমি তো বরাবর তৃণমূলেই ছিলাম!’
পারিবারিক মহল থেকে জানানো হয়, ‘মুকুল রায়ের শারীরিক ও মানসিক স্থিতি খারাপ’। এদিকে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে শুভেন্দু অধিকারী নিদান দিয়েছিলেন ‘সব ভন্ডামি!’
বিধানসভায় ডাকের পর ডাক আসে, মুকুল রায় গরহাজির। কিন্তু একইসাথে তৃণমূল শিবিরে থেকে, আবার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ থাকলে তো চলবেনা! কারণ নিয়মানুযায়ী ওই পদটিতে বিরোধী দলের প্রতিনিধিকেই বসানোর কথা। মুকুল রায় আছেন কোন দলে? সেটাই পরিস্কার হচ্ছিলনা। তাই যেনতেন প্রকারে বিজেপি থেকে মুকুলের পদত্যাগ চাইছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটলোনা। অবশেষে, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শুনানিতে স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন, “মুকুল রায় বিজেপিতেই রয়েছেন।” এবার এই সিদ্ধান্তের পর দেখা যাচ্ছে অন্য আরেক খেলা।
তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “স্পিকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।” অপরদিকে শুভেন্দু অধিকারী তা মানতে নারাজ। তিনি পাল্টা মামলা তুললেন সুপ্রিম কোর্টে। তৃণমূলের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, মুকুল রায়কে একরকম বিজেপির দিকেই ঠেলে দিতে পারলে বাঁচা যায়! বিধানসভার স্পিকারও সেইরদিকেই ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। মুকুল রায় এখনও বুঝতে পারছেননা তিনি কোন দলে, অথচ বিধানসভার শুনানিতে তিনি বিজেপির ‘অমূল্য সম্পদ’ বলেই বিবেচিত হয়েছেন।
এবার এই ‘সম্পদ’ নিয়ে বিজেপি কী করবে সেটাই শুভেন্দুর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধানসভার ওপর গোঁসা করে তেড়েমেড়ে একটা উচ্চকিত বিবৃতি দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “ন্যায়ের জয় হল। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ। মুকুল রায়ের দলত্যাগের প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য মাননীয় স্পিকারকেও ছেড়ে দেয়নি।” যদিও এই বক্তব্যের ধড়মুড়ো কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। অনেকেই ভাবছেন শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে আবার ভুলভাল ‘মিউটেশন’ প্রক্রিয়া শুরু হলো নাকি? এখন সুপ্রিম কোর্ট কী জানায় সেটাই দেখার।