অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড বা ফাঁসি কার্যকর হওয়া উচিত কিনা সে প্রশ্ন এখানে রাখার সম্ভাবনা নেই। কেননা দেশটার নাম সৌদি আরব। যেখানে গত শনিবার অর্থাৎ ১২ মার্চ একসাথে ৮১ জনের মৃত্যুদন্ড সংঘটিত হয়ে গেল। ‘মৃত্যু উদযাপন’ কথাটা শুনতে খানিক অস্বস্তিকর মনে হলেও ঘটনাটা খানিক এরকমই।
সৌদি আরবে মৃত্যু দন্ডের নিয়ম এইভাবেই পালিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি এই ‘গণ-মৃত্যুদন্ড’ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানিয়ে সৌদি আরবের সরকারি সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে “যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই আইএস, আলকায়দা, ইয়েমেনের হাউথি সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন এবং নাশকতামূলক কার্যকলাপে জড়িত ছিল।”
পূর্বেই এদের সবার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়ে থাকলেও এই শনিবারটিকেই কেন নির্বাচন করা হলো তার কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি। তবে কোভিড কালীন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ফাঁসির প্রক্রিয়াগত কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল, সেটা জানা গিয়েছে।
এই মূহুর্তে শাস্তির দিক থেকে নজিরবিহীন উদাহরণ তৈরি করল সৌদি আরব। একসাথে, একমঞ্চে ৮১ জন অপরাধীর একসাথে ফাঁসির ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে কোথাও চোখে পড়েনি। তবে এর কাছাকাছি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছিল এবং সেটা সৌদিতেই।
১৯৮০ সালে ৬৩ জন অপরাধীকে একসাথে ফাঁসি দেওয়া হয়। তথ্য বলছে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা প্রত্যেকেই ১৯৭৯তে মক্কার একটি মসজিদ অধিকৃত করে নাশকতামূলক তান্ডব চালিয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালেও ৪৭ জন জঙ্গিকে একত্রে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। তবে এবার নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ছাপিয়ে গেল সৌদি আরবের প্রশাসন, একদিনে একসাথে ৮১ জনের প্রাণদন্ড সংঘটিত করে ব্যতিক্রমী শাসনতন্ত্রের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠল। তবে সৌদি আরবের এই রাজতান্ত্রিক শাস্তির বিপক্ষে গণতন্ত্রের প্রতিবাদের নজিরও রয়েছে।
নির্মম শাস্তি প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গে সৌদি আরবে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ২০১১ সাল। সারাদেশ জুড়ে রাজতন্ত্রীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছিল তরুণদের একটি দল। এই মিছিলের প্রথম সারিতে ছিল তরুণতম মাত্র ১০ বছর বয়সী মু্র্তাজা কুুরেইরিস। এই মিছিলে সোচ্চার হয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল নতুন প্রজন্ম। দাবি উঠেছিল “আমরা সৌদি আরবে উন্নত মানবাধিকার চাই।” সেবার ধৃত মুর্তাজা কুরেইরিসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যুদন্ড ধার্য করেছিল সৌদি প্রশাসন।
বালকবয়সী এই সাহসী ছেলেটির মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংশঠন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।’ মানবিকতার আবেদনে আওয়াজ তোলার কারণেই অবশেষে তার মৃত্যুদন্ড খারিজ করতে বাধ্য হয় সৌদি প্রশাসন।