মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরেজমিনে খতিয়ে দেখে নিরুপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস ও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও বগুটুই অগ্নিকাণ্ডকে এত সহজে ছাড় দিতে রাজি নয় বিজেপি দল। রামপুরহাটের অগ্নিসংযোগের মূল অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত আনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার এবং আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক, এসডিপিও সায়ন আহমেদকে রাতারাতি সাসপেন্ড করা হলেও, ঘটনার মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতার চাপ আগাগোড়া বজায় রাখতে চাইছে বিজেপি।
বগটুইয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেদের তরফ থেকে রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটি। রাজ্যসভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “গ্রামে গিয়ে আমরা যা দেখেছি শুনেছি, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে যা জেনেছি সেসব তো রিপোর্টে থাকবেই, সেইসাথে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে উল্লেখও থাকবে।”
কমিটির অন্য আরেক সদস্য প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ জানান,”ঘটনাস্থলে গিয়ে একটা ব্যাপার পরিস্কার লক্ষ্য করেছি, মূহুর্তের মধ্যে বাড়িগুলোয় অগ্নিসংযোগ ঘটেনি। রাস্তার বিভিন্ন দিকে এমনকি ভেতরদিকের বাড়িগুলোতেও আগুন লেগেছিল। বহুক্ষণ ধরে হামলা চালানো হয়েছে।” এই দাবি করে ভারতী ঘোষের স্পষ্ট দাবি, “এটা শুধু পুলিশের গাফিলতি নয়, পুলিশও এই ঘটনায় সমান দোষী।”
গত বুধবার সুকান্ত মজুমদার , ভারতী ঘোষরা বগটুইতে পরিদর্শন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন বলে দাবি করেছেন। রিপোর্টে এই উল্লেখের পাশাপাশি সুকান্তর বক্তব্য, “পুলিশের ব্যর্থতা ও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড, রিপোর্টে সেটা স্পষ্ট উল্লেখ করব আমরা।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং রামপুরহাটের ঘটনাস্থলে যান। তাঁকে এলাকায় ঢুকতে কোনও মানুষ বাধা দেননি, বরং তাঁর প্রতি আস্থা পোষণের চিত্রই প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে দাঁড়িয়েই আনিরুলের গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য, নিহতদের পরিবারের একজনকে চাকরি ও জখমিদের চিকিৎসার সাহায্যের প্রকাশ্য ঘোষণা করেন। মমতা এটাও উল্লেখ করেছেন, “আমি জানি মানুষের মৃত্যুর বিকল্প কখনোই অর্থ বা চাকরি নয়, তবু রাজ্যসরকার এই দায়িত্ব নেবে। আহতদের চিকিৎসার ভারও রাজ্যের।”
তা সত্ত্বেও রাজনীতির ঘোলাজলের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেনা বিজেপি, একেবারে টার্গেট করেই যে তাঁরা রাজ্যের প্রশাসনিক ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ময়দানে নেমেছেন, এটা রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের একাংশ সাফ দেখতে পাচ্ছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে প্রকাশ্যে এনে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করবার সুযোগটা যে কোনোমতেই হাতছাড়া করবেনা বিজেপি, এতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। বরং ভিনরাজ্যের উদাহরণ সামনে রেখে বিজেপির প্রতি তাঁদের প্রশ্ন হাথরাসে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন ? অথবা একাধিক দাঙ্গার রিপোর্ট কারা তৈরি করেছেন? উত্তর সহজে মিলবে কি!