ভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য আর ভিন্ন রকমের ইউনিফর্ম নয়, রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুলে একইরকমের পোশাকের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার।
নবান্নের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা দিয়ে বলা হয়েছে রাজ্যের সরকারি স্কুল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অথবা সরকার দ্বারা পোষিত সমস্ত স্কুলেই নীলসাদা রঙের পোশাককে ইউনিফর্ম হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে। সেইমতো বিভিন্ন ব্লকের বিডিওরা স্কুলগুলির সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে পোশাক তৈরি করাবেন। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের স্কুলগুলোয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের মাপ নেওয়াও শুরু করে দিয়েছেন।
সরকারের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত সরকারি স্কুলের ছাত্রদের একটি করে হাফ ও ফুলহাতা শার্ট এবং একটি করে হাফ ও ফুল প্যান্ট দেওয়া হবে, সাথে টাইও দেওয়া হতে পারে। আর ছাত্রীদের জন্য ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত দুটি শার্ট ও একটি করে স্কার্ট ও টিউনিক দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
উচ্চপ্রাথমিক অর্থাৎ সিক্স থেকে এইট পর্যন্ত ছাত্ররা দুটি ফুলপ্যান্ট এবং একটি করে হাফ ও ফুলহাতা শার্ট পাবে। একইরকমভাবে উচ্চপ্রাথমিকের ছাত্রীদের দেওয়া হবে দুই জোড়া করে সালোয়ার কামিজ এবং ওড়না। লোগো সম্বলিত ব্যাজও সরকারি দপ্তর থেকে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, সমস্ত স্কুলের ক্ষেত্রেই কালার কোড হবে একইরকম — নীলসাদা। এমনটাই জানিয়েছে শিক্ষা দপ্তর। অর্থাৎ আলাদা স্কুলের জন্য আলাদা ইউনিফর্মের ধারণাটি এরাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে আর থাকছেনা। তবে রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’ সংগঠন। এই সংগঠনের রাজ্যসম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেছেন, “আমরা রাজ্যসরকারের এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিপক্ষে। এর ফলে পড়ুয়াদের আলাদা করে চিহ্নিত করা যাবেনা। একটি স্কুলের পড়ুয়া অন্য স্কুলে চলে এলে চিহ্নিত করা মুশ্কিল হবে।” একরকম ইউনিফর্মের এই সিদ্ধান্ত বদলানোর আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
তাছাড়া আচমকা এই সিদ্ধান্তে ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘদিনের অভ্যেস বদলাতে সমস্যা হতে পারে। আগে ইউনিফর্ম দেখেই স্কুল চেনা যেত। এই পদ্ধতি নিলে সেই সম্ভাবনাটুকুও আর থাকবেনা। প্রসঙ্গত, আগে সরকারের বরাদ্দ অর্থ নিয়ে স্কুলগুলিই তাদের পছন্দমাফিক পোশাক তৈরি করাতো, স্বনির্ভর গোষ্ঠীও নির্বাচন করত নিজেরাই। তার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বাইরের রাজ্য থেকেও পোশাকের কাপড় আসতো। এই সিস্টেমেই সরকারি লাগাম দিতে চাইছে রাজ্যসরকার। রাজ্যের বয়নশিল্পের উন্নতির কথাটাও এক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর।