মুসলিম মৌলবাদীদের দাঙ্গাতেই ভেঙে ফেলা হয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন এই হিন্দু মন্দির। এবার বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে সেই ভেঙে যাওয়া মন্দিরকেই পুনর্নির্মাণ করল পাকিস্তানের ইমরান খান সরকার। নির্মাণ শুধু নয়, নতুন বছরের প্রারম্ভেই ঐতিহ্যশালী এই মন্দিরে পূজো দিয়ে আচার উৎসব পালন করলেন ভারত, আমেরিকা, সৌদি আরব সহ ৫টি দেশ থেকে আসা প্রায় এক হাজার দর্শনার্থী। তাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থাও করল পাক প্রশাসন। এই ঘটনাকে এককথায় নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করলেন সবাই।
পাখতুনখোয়ার করক জেলার অন্তর্গত টেরি গ্রামে ছিল পরমহংসজি মহারাজের এই শতাব্দী প্রাচীন বিখ্যাত মন্দির এবং সমাধি। তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের দাঙ্গায় মুসলিম মৌলবাদীরা প্রথম এই মন্দির ভেঙে দেয়। এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মহারাজের সমাধির ওপরও আক্রমণ চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় সমাধিসৌধ। মৌলবাদী গোষ্ঠী ‘জামায়েত উলেমা-ই-ইসলাম ফজল’-এর ওপর এই দাঙ্গার অভিযোগ উঠেছিল। সেইসময় এই খবরে হিন্দুধর্মীয় মহলে হুলস্থুল বেধে গিয়েছিল রীতিমতো।
এবার সেই সমাধি ও মন্দির পুনরায় নতুন করে নির্মাণ করে দিল পাকিস্তান সরকার। পুরো ১ বছর ধরে এই মন্দির ও সমাধি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা! এই ব্যয়ভার ইমরান খানের সরকারি তহবিল থেকেই বহন করা হয়েছে।
জানুয়ারির ১ তারিখ, ইংরিজি নববর্ষের সূচনার দিনই মহারাজ পরমহংসজির নবনির্মিত সমাধি ও মন্দিরে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল হিন্দু কাউন্সিল। রবিবার পর্যন্ত টানা এই অনুষ্ঠানে ভারত, আমেরিকা, সৌদি আরব, দুবাই সহ ৫টি প্রদেশের প্রায় ১০০০ হিন্দু প্রতিনিধিদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওয়াঘা সীমান্ত পথে এই বিপুল সংখ্যক হিন্দু প্রতিনিধিদের বিশেষ সুরক্ষা দিয়ে অনুষ্ঠানে আনা হয়েছিল সরকারি প্রহরায়। ৬০০ পাকিস্তানি ‘রেঞ্জার্স’ ও গোয়েন্দারা এই কাজে নিযুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি আমন্ত্রিত হিন্দুদের জন্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে সমস্তটাই প্রশংসিতভাবে করা হয়েছে।
এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত দেখে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সচেতন মহলের অনেকেই মনে করছেন — পাকিস্তানকে যাতে আর ‘হিন্দু বিদ্বেষী’ না বলা হয়, সেকারনেই সচেষ্ট ইমরান খান সরকারের এই উদ্যোগ ও আয়োজন।