সাম্প্রতিক একের পর এক আঘাতে ভেঙে পড়ছেন সানি লিওনি। পাশ্চাত্যের হাওয়ায় বেড়ে ওঠা ভারতীয় প্রবাসিনী সানি লিওনি মূলধারার সিনেমায় আসার পর থেকে বুঝে উঠতে পারেননি কেন এত প্রত্যাঘাত! কেন তাঁকে ঘিরে এত নিন্দার ঝড়! গেল গেল রব!
মধ্যবিত্তের করুণ আচ্ছাদন থেকে উঠে আসা করণজিৎ কৌর ভোহরা, যিনি একসময় বেকারি সেন্টারে কাজ করতেন, পাশাপাশি ট্যাক্স ফার্মে কর্মরতা ছিলেন, কালে চক্রে তিনিই পরবর্তীকালে হয়ে উঠলেন অদ্বিতীয়া পর্নস্টার সানি লিওনি। পর্নছবির জন্য ৫২ টি অ্যাওয়ার্ড যাঁর ঝুলিতে, আদ্যোপান্ত ভারতীয় ঘরানার শরীরে পশ্চিমী আবেদনের মিশেলে তিনি যে পর্নছবিকে মোহনীয় শিল্পরূপ দিয়েছেন তার গুরুত্ব একদিক থেকে কম কিছু নয়। কিন্তু তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিলনা — ভারতীয় সিনেমার দর্শক তাঁকে কখনোই নায়িকা হিসেবে মেনে নেবেননা!
তাই পরবর্তীকালে মেইনস্ট্রিম সিনেমার এককোণে একটুখানি জায়গা করতে তাঁকে দশটা বছর ধরে তুমুল লড়াই ও চরম লাঞ্ছনা স্বীকার করতে হয়েছে।তবুও বলিউড ছবির জগতে হালকা যৌনতার উষ্ণতা ছড়ানো ‘আইটেম গার্ল’ এবং হরর মুভির রোঁয়া জাগানো ছায়ামূর্তি টাইপের রোল ছাড়া আর কোনও জায়গা করে উঠতে পারেননি, বলা ভালো জায়গা পেতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। কারণ ভারতীয় ছবির দর্শকদের মানসিকতার ফারাক। যে দুটো আগ্রাসী চোখ নিয়ে ভারতীয় পুরুষরা তাঁর পর্নছবি গোগ্রাসে গিলেছে, সেই চোখ সিনেমার পর্দায় পর্নতারকা নয় ‘মা-বোন-প্রেয়সী-গৃহিনীর’ প্রতিমূর্তি দেখতে অভ্যস্ত। সেখানে সানি লিওনি যোগ্য সম্মান পাবেন কীকরে? তাই কাঁদছেন সানি লিওনি। অভিমানে গুমরে উঠে প্রতিমূহুর্তে নিজের অতীতের জন্য আফশোস করছেন বারবার।
ভারতীয় ছবিতে তাঁর খোলামেলা যৌনতার আবেদন বজরং দলের হিংসার শিকার হয়েছে অনেকবার। গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই ‘মধুবন মে রাধিকা’-র রিমিক্স নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মথুরার পুরোহিত সম্প্রদায়। এই রিমিক্স বন্ধ করার জন্য আইনি হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপি সরকারের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র।
সানি লিওনি কাঁদছেন, সেই সানি, যিনি শিশুদের পর্নছবিতে ব্যবহারের ঘোষিত বিরোধী। এমনকি নাচের শ্যুটিংয়ের সেটে একদল বাচ্চা ছেলের উপস্থিতির জন্য তিনি শ্যুটিং ক্যান্সেল করে দিয়েছিলেন–তাঁর জন্য ভারতীয় ধর্মান্ধদের এমন প্রতিদান দেখে আর সামলাতে পারছেননা সানি লিওনি।
সম্প্রতি ভারতের পাশাপাশি আপত্তি তুলল বাংলাদেশের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়। সানি লিওনির বাংলাদেশ যাত্রা নিয়ে উঠেছিল তীব্র আপত্তি। এমনকি তাঁর ভিসার আবেদন পর্যন্ত খারিজ হয়ে যায়। দুঃখ পাচ্ছেন সানি লিওনি, অঝোরে কাঁদছেন। যদিও শেষমেশ ভিসা মঞ্জুর হওয়ায় বাংলাদেশে যেতে পেরেছেন। নাচাগানা করেছেন ‘দুষ্টু পোলাপান’ মিউজিক ভিডিওতে। ফ্লাডলাইট নিভে গেলে, প্যাক আপের পর ফিরে গিয়েছেন নিজের ছোট্ট এককামরার বিলাসবহুল রুমে। ড্যানেয়েলের ফোন ধরছেননা। বালিশ বুকে টেনে নিয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছেন বিশ্বখ্যাত পর্নঅভিনেত্রী সানি লিওনি।
এতবড় সাফল্যের খ্যাতি ছেড়ে যাঁকে ‘দুষ্টু পোলাপান’ -এ নেচে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে হয় শুধুই মেইনস্ট্রিমে একটু জায়গা পাওয়ার জন্য! পর্নস্টার তকমা মোছার জন্য! তাঁর কষ্ট বালিশ ছাড়া আর কেইবা বুঝবে।
সানি আপনি ভীষণ বোকা! কয়েকদশক আগে টিভি পর্দার বিখ্যাত ‘সীতা’ অভিনেত্রী দীপিকা চিখলিয়ার কাহিনী আপনার বুঝি জানা নেই? রামায়ণ দেখার পর দর্শকরা সিনেমায় ‘হট’ নায়িকা রূপে দেখে সেই দীপিকাকেই আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। দীপিকাও সেদিন আপনার মতোই কেঁদেছিলেন। সীতা কেঁদেছিলেন। এটা রামায়ণের দেশ। এখানে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়, বোকা আপনি সেটাও জানেননা ! আপনি কাঁদুন সানি লিওনি ! পাতালপ্রবেশের আগে পর্যন্ত কেঁদে ভাসিয়ে দিন।