নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা কমেছে। প্রমাণ স্বরূপ একাধিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের দৃষ্টান্ত তুলে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে আমেরিকার ‘কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ‘। উল্লেখ্য, এই কমিশনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রকের হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করে থাকে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলি সার্ভে করা ও তথ্য সংগ্রহ করে মার্কিন বিদেশমন্ত্রককে রিপোর্ট পাঠানোটাই এই সংস্থার কাজ। আর এই কমিশনের রিপোর্টেই ধর্মীয় অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মোদীর ভারত।
সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি অনেকগুলি সাম্প্রদায়িক হিংসার তথ্য রিপোর্টে তুলে ধরেছে এই কমিশন। এই নিয়ে পরপর ৩ বছর এই রিপোর্ট পেশ করল উল্লিখিত কমিশন। এমনকি ভারত সম্পর্কে আমেরিকাকে নিষেধাজ্ঞা জারির পরামর্শও রয়েছে সেই রিপোর্টে। কমিশনের রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, “নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাদের হিন্দুরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি অনুযায়ী চলতে গিয়ে যেধরনের নীতি প্রণয়ন করছে তা সংখ্যালঘুদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে।” রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে , “গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সাংবাদিক নিগ্রহের মতো ঘটনা থেকে সরকারের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করেছে।”
দাঙ্গার ঘটনার পাশাপাশি কাশ্মীরে মানবাধিকার কর্মী খুরন পারভেজের হত্যা এবং ইএপিএ আইনে বরিষ্ঠ খ্রীষ্টান ফাদার স্ট্যান স্বামীর গ্রেপ্তার ও মৃত্যুর ঘটনাদুটির দিকে বিশেষ নজর আকর্ষণ করেছে কমিশন। এছাড়াও ২০২১ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকারের প্রতিনিধিরা যেভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধর্মান্তরিত খ্রীস্টানদের শনাক্ত করছিলেন, এই ঘটনাটিও ভালো চোখে দেখছেননা তাঁরা।
রিপোর্টে এইসব তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতোই ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। যদিও কূটনৈতিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই রিপোর্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেননা বলেই মনে করছেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কমিশনের এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভারতকে ইচ্ছাকৃতই উদ্বেগজনক তালিকায় রাখার উদ্দেশ্যেই সংগঠনটি এই ধরণের উদ্বেগপূর্ণ রিপোর্ট পেশ করছে।”
তবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই রিপোর্টকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও, পরোক্ষভাবে একটা চাপ তাঁর ওপর রয়েছেই। এতবড় একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ৩ বছর ধরে লাগাতার মোদী সরকারের বিরূপ সমালোচনা করে চলেছে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কীভাবে বিষয়টির জবাব দেবে আমেরিকা! সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।