সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এই পোস্টটি আগের একটি পোস্টের সূত্র ধরেই একটা জবাব বলে ধরে নেওয়া যায়।
পুরুষদের পোশাককে ‘অশ্লীল’ বিবেচিত করে ২৯ জানুয়ারি ফেসবুকে ওই পোস্ট লিখেছিলেন তসলিমা। তাতে “লুঙ্গির নিচে আন্ডারওয়্যার পরা উচিত” পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি, ‘মেয়েদের সামনেই ঘন ঘন’ বিশেষ নিষিদ্ধ স্থানে ‘চুলকানোর’ কথা লিখে একটি চরম বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেন। যা এইমূহুর্তে ‘দেশের বৃহত্তর সমস্যা’ বলে কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ।
তবে কড়া সমালোচনায় নেমেছেন অসংখ্য পুরুষ। স্বাভাবিক ভাবেই ওই পোস্টের বাচনভঙ্গি ‘লুঙ্গি পরা’ সব পুরুষদের উদ্দেশ্যেই লিখিত বলে ধরে নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছেন অসংখ্য নেটিজেন। এবার আরেকটি পোস্ট করে তার জবাব দিলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “কত সিরিয়াস বিষয় নিয়ে দিন রাত লিখছি। কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তেমন। যেইনা মজাচ্ছলে লুঙ্গি নিয়ে লিখলাম, অমনি পুরুষজাতি ক্ষেপে আগুন।”
এরপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা যোগ করেছেন তসলিমা। বলেছেন, “আমাদের উপমহাদেশীয় সমাজের অধিকাংশ পুরুষ বিশ্বাস করেন ধর্ষণের কারণ মেয়েদের পোশাক। তাঁরাও সরবে না হলেও নীরবে বিশ্বাস করেন মেয়েদের পোশাকের কারণেই ধর্ষণ ঘটে।” এই জাতীয় পুরুষরাই তাঁর লেখার বিরোধিতা করছে বলেই উল্লেখ করেছেন লেখিকা।
এছাড়াও অনেকে প্রতিবাদ করে জানিয়েছিলেন লুঙ্গি আজ থেকে নয় প্রথম থেকেই বাঙালির পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাদের উদ্দেশ্য করে পোশাকের বিবর্তন সম্পর্কে বুঝিয়েছেন তসলিমা নাসরিন।
সেইসঙ্গে তসলিমার আরো সংযোজন, “কোনও কোনও বিজ্ঞ বলছেন ‘পোশাক ব্যাপার নয়, প্যান্ট পাজামা পরেও পুরুষেরা অশ্লীল আচরণ করতে পারে, সমস্যা মানসিকতায়, পোশাকে নয়।’ আমার যেন জানতে বাকি রয়েছে প্যান্ট-পরা পুরুষদের অশ্লীলতা সম্পর্কে, তাঁদের নারীবিদ্বেষী মানসিকতার ব্যাপারে।”
এই প্রসঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা অনুসারে যাত্রীভরা বাসে ‘প্যান্টের জিপ খুলে…’ প্রকাশ্য অসভ্যতার একটি রগরগে অশালীন ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। যা পাঠকের অবশ্য পাঠ্য। দীর্ঘকাল পাঠকদের সাথে পরিচিত বলেই হয়তো তসলিমা নিশ্চিত হয়েছেন, পাঠক এই বর্ণনা গিলবেই। অনেকে তেমনটাই মনে করছেন।
এরপর সুদীর্ঘ পোস্টে গ্রামীণ অঞ্চলের লুঙ্গি পরিহিতদের লুঙ্গি অ্যাক্টিভিটির যে বর্ণনা দিয়েছেন, এবং লুঙ্গি ছেড়ে লুঙ্গির ‘ভিতরকার ধনসম্পদ’ আঁকড়ে ধরার উদাহরণ টেনে, এমন টানাটানি শুরু করেছেন ভয়ে অনেকে লুঙ্গি পরাই হয়তো ছেড়ে দেবেন। এরপরেও আর কেউ সমালোচনা করবে, এমনটা ভাবা যায়না। ‘ধনসম্পদের’ প্রতি মায়াবশতই পুরুষরা এরপর চুপ করে যান।