আবারো এক নিদারুণ ঘটনা নদীয়ার হাঁসখালিতে। এবারেও অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল নেতা ব্রজগোপাল গয়ালির পুত্র সোহেল গয়ালি নাবালিকার ধর্ষণ ও মৃত্যুর অভিযোগে অভিযুক্ত। সোহেল পুলিশি হেপাজতে। চলছে তদন্ত। উল্টোদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ঘিরে দাবানলের মতো বিতর্কের আঁচ ছড়িয়েছে বাংলায়।
জনসাধারণের কাছে বাস্তবিকই আজ সত্যমিথ্যা নির্ধারণ করা মুশ্কিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আসলে ঘটনা এখন আর ১টি নেই, ২টি ঘটনায় রূপান্তরিত। প্রথমত, তৃণমূল কংগ্রেস নেতার পুত্রের নাবালিকাকে ধর্ষণ; দ্বিতীয়ত, সোহেল গয়ালি নামের এক যুবকের নাবালিকার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে শারীরিক নিগ্রহ। কার্যত একটি ঘটনাকে দুইদিক থেকে দুরকমভাবেই টানাহ্যাঁচড়া চলছে।
উল্লেখ্য, গতকালই মেয়েটির মা জানিয়েছেন “মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিলনা, তবে ছেলেটার সাথে প্রেম ছিল।”
অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ‘অ্যাফেয়ার্স ছিল’ ঘটনাক্রম সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। তবে অ্যাফেয়ার্স থাকলেই ধর্ষণ করার লাইসেন্স পাওয়া যায়না। অপরাধটা অপরাধই। এক্ষেত্রে অপরাধটা কতদূর সেটা বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে মূলত দুটি কারণে। এক, মেয়েটির কোনও সরাসরি অভিযোগের আগেই অকস্মাৎ মৃত্যু, দুই, তড়িঘড়ি মৃতদেহ জ্বালিয়ে ফেলা।
ঘটনার সাথে যুক্ত এক হাতুড়ে ডাক্তার সমীর বিশ্বাসকে জেরা করেছে পুলিশ। ডাক্তারের বক্তব্য, “মেয়েটি ভোর ৪টে নাগাদ আমার কাছে আসে। তলপেটে ব্যথার জন্য ওষুধ চায়। আমি ব্যথার ওষুধ দিই। কিন্তু পরে জানতে পারলাম ওষুধ খাওয়ার আগেই নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে।” এখানে অনেকগুলি প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায়।
ডাক্তারের দেওয়া ওষুধের মোড়ক কি উদ্ধার হয়েছে? ওষুধ খাওয়ার পরেই যে মৃত্যু হয়নি তার সপক্ষে প্রমাণ কোথায়? ধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার জন্যই মৃত্যু হয়ে থাকলে হাতুড়ে ডাক্তার সমীর বিশ্বাস কি সেটা সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও আঁচ পেতেননা? এমন একটা ব্যাপার গোপনে ঘটে যায় কীকরে? সবচাইতে বড় প্রশ্ন, মেয়েটির পরিবার লাশ দাহ করতে এত তাড়াহুড়া করল কেন? শ্মশানকর্মী করুণা বাউলির দেওয়া সাক্ষ্য বলছে, “ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই মেয়েটির দাহকার্য করা হয়েছে।” এমনকি চটজলদি আগুন জ্বালাতে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়েছিল বলেই তদন্তসূত্রে প্রকাশ। তাই সম্পূর্ণ তদন্ত ছাড়া এই ঘটনা সম্পর্কে ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলাটাও যুক্তিযুক্ত নয়।
মেয়েটি তৃণমূল নেতা ব্রজগোপাল গয়ালির পুত্র সোহেল গয়ালির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। যদিও ব্রজগোপাল পুলিশি জেরায় সেটা অস্বীকার করে বলেছেন , বাড়িতে সেদিন কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি, হলেও অন্য কোথাও হয়েছিল। সেটা তদন্তসাপেক্ষ।
তবে মেয়েটি যে বাড়িতে জন্মদিনে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। এরপর রাতে ফিরে এসে তার শরীর খারাপ হয়। তারপরে তার মৃত্যু। তড়িঘড়ি লাশ জ্বালিয়ে দেওয়া। এত অল্পসময়ে এককিছু ঘটল অথচ অভিযোগ দায়ের হল ৫ দিন পরে? কেন? এটা মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূলনেত্রীর একার প্রশ্ন নয়। শুরু থেকে যাঁরা এই খবরটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, প্রশ্নগুলো তাঁদের মনে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দেবে। তদন্তে সোহেল গয়ালি অভিযুক্ত প্রমাণ হলে অবশ্যই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। প্রশ্নকারীরাও এই দাবি জানাচ্ছেন।