সংস্কৃতি জগতে যেন মৃত্যুর মিছিল চলেছে। একের পর এক নক্ষত্র খসে যাচ্ছে আকাশ থেকে। এ যেন থামতেই চাইছেনা! গতকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুপংবাদের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার বজ্রাঘাত! আপামর সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের ছেড়ে না ফেরার জগতে পাড়ি দিলেন সঙ্গীতস্রষ্টা বাপ্পি লাহিড়ি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৯ বছর।
আগের বছরের শেষদিকে তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রায় একমাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সবার প্রিয় ‘বাপ্পিদা’। যদিও সোমবার হাসপাতাল থেকে তাঁকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। মনে করা যাচ্ছিল হয়তো এই যাত্রায় বিপদ কাটিয়ে উঠলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হলনা। চিকিৎসক দীপক নামজোশি জানিয়েছেন, “মঙ্গলবারই তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ডাক্তার ডাকা হয় বাড়িতে। তারপরেই আবার তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। একাধিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। মাঝরাতের দিকে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে তিনি মারা যান।”
৮০-৯০ দশকে হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত জগতে সাফল্যের সঙ্গেই নিজস্ব একটা ট্রেন্ড তৈরি করতে পেরেছিলেন সুরস্রষ্টা ও কন্ঠশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ি। বলিউড ও টলিউডের সঙ্গীত সৃষ্টিতে আর ডি বর্মনের পরবর্তীতে যাঁর নাম অবিসংবাদিত তিনি বাপ্পিদা। উষা উত্থুপ তাঁকে নাম দিয়েছিলেন ‘ডিস্কো কিং।’
বলিউড সিনেমার একাধিক সিনেমার গানে সার্থক সুরসৃষ্টির পাশাপাশি বাংলা সিনেমাতেও তিনি ছিলেন ভীষণ জনপ্রিয়। ‘অমর সঙ্গী’, ‘গুরুদক্ষিণা’ ছবিগুলোর প্রতিটি গান প্রায় কিংবদন্তির মতোই লোকের মুখে মুখে ঘোরে। ‘চিরদিনই তুমি যে আমার/যুগে যুগে আমি তোমারই’ বাংলা গানের ভক্তদের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছিল তাতে কোনও সংশয় নেই।
মাত্র ৬৯ বছর বয়সে বাপ্পি লাহিড়ির এই মৃত্যু একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছে শিল্পীমহল। গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন উষা উত্থুপ, জানান,’আমার অন্যতম গানগুলি বাপ্পিদার সুরেই গাওয়া।’ শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।ভারতীয় সঙ্গীতে পশ্চিমি মিউজিকের অন্যরকম এক সংমিশ্রণ তৈরি করেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি।’
সুরকার শান্তনু মৈত্র ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা মনে করে বলেন,’বিভিন্ন সময়ে গান নিয়ে আলাপ আলোচনা আমাদের যুগের অনেক গায়ক ও সুরকারকে সমৃদ্ধ করেছে। শুধু ডিস্কো নয় তাঁর গানে অপূর্ব মেলোডির ছোঁয়াও ছিল।’
গভীর বেদনা সহকারে সঙ্গীতস্রষ্টা জিৎ গাঙ্গুলী জানান, ‘সঙ্গীত জগতে পরপর নক্ষত্রপতন। কাল সন্ধ্যাদি আজ বাপ্পিদা। বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে পরিবারের সদস্যকেই হারিয়েছি।’
বাপ্পি লাহিড়ির প্রয়াণে শোক জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ট্যুইট করে বলেন,’কিংবদন্তি গায়ক ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়িজি-র মৃত্যুর খবরে আমি বেদনাহত। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় সঙ্গীতজগতে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করল। বাপ্পিদা তাঁর বহুমুখী গান এবং প্রাণবন্ত আচার ব্যবহারের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর পরিবার ও ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। ওম শান্তি।’
সুরের আকাশে এখন বাপ্পি লাহিড়ির সুরই ভেসে বেড়িয়ে বলছে, “মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রখনা/কভি আলবিদা না ক্যাহেনা।”