কোনও ব্যক্তি যদি আক্ষরিক অর্থেই একা হন, যদি তাঁর নিকট কোনও আত্মীয় না থাকে এবং সবচেয়ে কাছের মানুষ যদি অন্য ধর্মের হন, তাহলে তাঁর মৃত্যুতে সেই কাছের মানুষরাই শেষকৃত্য করবেন –এটাই কি কাম্য হওয়া উচিত নয়?
জনমত কী বলবে জানা নেই, তবে শিল্পাঞ্চল রাণীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এমন ঘটনাই ঘটল। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনাটিকে সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখেছেন এবং উৎসাহ যুগিয়েছেন।
হুগলীর আদি বাসিন্দা যোগেন্দ্র প্রসাদ কর্মসূত্রে বহুদিন আসানসোলে রয়েছেন। রাণীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কাজ করতেন যোগেন্দ্র। তিনকূলে কেউ নেই, তাই বাসস্ট্যান্ডেই শ্রমিকদের ঘরে থাকা খাওয়া চলত। এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে ৫৫ বছর বয়সী যোগেন্দ্র প্রসাদ মারা যান। নিকট আত্মীয় না থাকায় শামসুদ্দিন নামে এক পরিচিত প্রতিবেশি যোগেন্দ্রর শেষকৃত্য করতে এগিয়ে আসেন। অবশ্যই বাসস্ট্যান্ডের অন্যান্য কর্মীরাও তাতে সম্মতি দেন ও সহায়তা করেন। দামোদর নদের ঘাটে যোগেন্দ্রর মরদেহ দাহ করে সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি মেনে আচার পালনের দশদিন পরে মাথা ন্যাড়া করে, পিন্ডদান ও পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন শামসুদ্দিন।
বাস মালিক ও বাস সংগঠনের কর্মী থেকে শুরু করে এলাকার স্থানীয় মানুষজন শামসুদ্দিনের এই কাজে আর্থিক সাহায্য করেছেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ডের সহকর্মীদের খাওয়াদাওয়া সবটাই তাঁদের সাহায্যেই সম্পন্ন হয়। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তাঁদেরই একজন জানান, “আমার সহকর্মীর শেষকৃত্য করল এক মুসলিম ব্যক্তি শামসুদ্দিন। এটা মহান কাজ। রাজনৈতিক দলাদলি ও ধর্ম নিয়ে উন্মাদনার এই সময়ে যে বার্তা তিনি দিলেন তা সকলের শিক্ষণীয়। এই বার্তা যেন সারা দেশে, সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।”
আর যিনি এই কান্ডটি করলেন, সেই ব্যক্তি শামসুদ্দিনের সোজাসাপ্টা জবাব, “আমি একজন পুরুষ হিসেবে জন্মেছি। কোনো ধর্ম সঙ্গে করে তো জন্মাইনি। পরে জানতে পেরেছি আমার ধর্ম। তবে আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন মানুষ। আর এই কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্ববোধ করছি।”