সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার পর্যন্ত রাজনৈতিক সংলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বীরভূমের রামপুরহাট। পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ভাদু শেখ এবং ৯ নিরীহ গ্রামবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ত্রস্ত হয়ে উঠেছে বগটুই গ্রাম ও সংলগ্ন অঞ্চল।
ফিরহাদ হাকিম সহ রাজ্যসরকারের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নবান্নে বিশেষ বৈঠক করে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, ভাদু শেখকে খুন এবং এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আগুন জ্বালিয়েছে বিরোধীরাই। উল্টোদিকে বিরোধী দল বিজেপিও ইতিমধ্যে প্রতিবাদের মঞ্চে নেমে পড়েছে।

গ্যাস সিলিন্ডার বা শর্টসার্কিট থেকে আগুন, বোমা ছোঁড়া কিংবা আগুন জ্বালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা! সমগ্র ঘটনায় বিরোধী এবং শাসকদল পরস্পরকে আক্রমণ শানিয়ে চলেছে। তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় আঙুল উঠছে যেমন বিরোধীদের দিকে, ঠিক তখনই বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি,”তৃণমূলই তৃণমূলকে মারছে। সিন্ডিকেটের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়েই এই লড়াই।”
দিল্লীর সাংবাদিক সম্মেলনে গতকাল লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গোটা ঘটনাটাই তৃণমূলের গোষ্ঠদ্বন্দ্বের ফল। এরকম ঘটনাই এখন পশ্চিমবঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।” লকেটের অভিযোগ, “এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে ১৪-১৫ জন মারা গেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশবাহিনী ৭ জনের বেশি মৃত্যু দেখাচ্ছেনা।” অনুব্রত মন্ডলের ভূমিকার দিকে কটাক্ষ তুলে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ও গৌরব ভাটিয়া বলেন, “তদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার আগেই তৃণমূল নেতা বলে দিচ্ছেন সামান্য ঘটনা! টেলিভিশনের শর্টসার্কিট থেকে কীভাবে তিন চারটে বাড়িতে আগুন লেগে যায়! এইসব মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, সেখানকার তদন্ত কীভাবে করা হবে।”
এলাকা পরিদর্শন করে ফিরহাদ হাকিম স্বচ্ছ তদন্তের আশ্বাস দিলেও তা মানতে নারাজ বিজেপি নেত্রী লকেট। তবে এদিনের চিত্রনাট্যে নিজের সেরা সংলাপটি একেবারে রসে মাখিয়ে ছুঁড়েছেন লকেট। শাসকদলের প্রতি তাঁর সরাসরি অভিযোগ, “গোটা রাজ্যে যত রসগোল্লার দোকান রয়েছে, সেই সংখ্যক বোমা বানানোর কারখানা তৈরি করেছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদল রসগোল্লার মতো বোমা ছোঁড়ে!”
রাজ্যের বিরোধী দলের প্রতিনিধি লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবাদ জাহির করার সম্পূর্ণ অধিকার তাঁর রয়েছে। তবে এহেন সংলাপ অতিনাটকীয় বলেই মনে করছেন সচেতন মহলের একাংশ। অনেকের সন্দেহ, লকেট বোধহয় রাজ্যটাকে উত্তরপ্রদেশ ভেবে কথাগুলি বলেছেন। মানুষের মৃত্যু মিছিলের প্রতি সমবেদনা সত্ত্বেও অনেকের দাবি লকেট চট্টোপাধ্যায় চাইলে অভিনয়টাই করতে পারতেন। কেননা রাজনৈতিক মঞ্চে এসে জীবনের সেরা অভিনয়টি করে গিয়েছেন তাপস পাল। পরিণতিও হাতেনাতেই পেয়েছিলেন।
তাপস পাল কোন দল করতেন সেটা নিশ্চয়ই লকেটের অজানা নয়! তাহলে কেন তিনি আবার সেই অভিনেতার জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করছেন, সেটাই রাজ্যবাসীর প্রশ্ন। স্বচ্ছ তদন্তের উচ্চকণ্ঠে দাবি! হ্যাঁ এটা সকলেরই কাম্য। শুধু অভিনয়টা যেন অন্যের অনুকরণে না হয়, এই অনুরোধই রেখেছেন সিরিয়ালপ্রেমী মানুষজন।