কুড়ালজুড়ির বাদাম বিক্রেতাকে এখন আর চেনা যাচ্ছেনা। মানে তাঁকে পরিবেশন করা হচ্ছে এমনই রঙবাহারি সাজেবাহারে যাতে তাঁর খোলনলচে আমূল বদলে যায়! অথচ ভুবন নিজে তাঁর আটপৌরে গ্রামীন ছাপ মুছে ফেলতে পারেননি এখনও, এখনও তাঁর কন্ঠে সেই ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম’ গান। এই গানের ফলেই তাঁর পরনে ব্লেজার, চোখে সানগ্লাস। “কিন্তু ভাইরালের মেয়াদ কতদিন?” এই প্রশ্নই সম্প্রতি করছেন অনেকে।
ভুবন বাদ্যকর কলকাতা শহরের একটি স্বনামধন্য পাবে হাজির হয়ে গান পরিবেশন করার পর থেকেই অনেকে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন নেটদুনিয়ায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরেছেন বিখ্যাত সাহিত্যিক বিনোদ ঘোষাল। তিনি অবশ্য ভুবন বাদ্যকরকে দোষারোপ করছেননা। শুধু তাঁর চারপাশের পরিমন্ডলকে উদ্দেশ্য করে সতর্ক করেছেন, “এই মানুষটা জোকার নয়।”
বলেছেন, “এই মানুষটির জন্য আমার এখন কষ্ট হয়। সত্যিই কষ্ট হয়। ওর হাসি, কথাবার্তা দেখলে, শুনলেই বোঝা যায় খুব সহজ সরল একজন মানুষ যে আধুনিক চোখ ঝলসানো আলোর কথা কোনওদিন কল্পনা করেননি। নিজের সামান্য রুজির জন্য নিজের প্রোডাক্ট নিয়ে একটি গান বেঁধেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে তিনি আচমকাই বিখ্যাত। ঠিক যেভাবে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছিলেন রানু মণ্ডল।” এর পরিণতি কী হবে? তাই নিয়েই চিন্তিত সবাই।
সম্প্রতি কলকাতার বিখ্যাত পাব ‘সামপ্লেস এলস’-এ ভুবন বাদ্যকরকে আনা হয়, তিনিও সহজিয়া ভঙ্গিতে ‘কাঁচা বাদাম’ গান পরিবেশিত করেন। এই ভিডিও পাবের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হতেই নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে কমেন্ট সেকশন।
‘সামপ্লেস এলস’ পাবের সাংগীতিক ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে নেটনাগরিকরা কেউ কেউ বলছেন, “সামপ্লেস এলসের কি ব্যবসা একদমই হচ্ছেনা?” অনেকেই বিখ্যাত পাবের রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে সমস্যা হলো যাকিছু ভাইরাল তার সবটাই যে সব মানুষের পছন্দ হবে তা নাও হতে পারে। ভুবন বাদ্যকরের ‘কাঁচা বাদাম’ গানের রিদম এর সাথে অস্ট্রেলিয়ার কেউ পা নাচিয়ে বাহবা কুড়োতেই পারেন! এর মধ্যে নতুনত্ব আছে। তেমনই সমালোচকদের মতে, কুড়ালজুড়ির বাদাম বিক্রেতা ভুবনের ‘কাঁচা বাদাম’ গান জনপ্রিয় –এই পর্যন্ত ঠিক আছে, বাড়াবাড়িটা মেনে নেওয়া যাচ্ছেনা।
এমনকি সাম্প্রতিক অতীতে রানু মন্ডলের তুলনা দিচ্ছেন কেউ কেউ। ভুবনকে সামনে রেখে কিছু মানুষ স্বার্থসিদ্ধি করছেন কি? এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন এবং নিন্দিত হচ্ছেন। বিনোদ ঘোষালের ভাষায়, “বাঁদরখেলার বাঁদরের মত ব্যবহার করা হচ্ছে ওঁকে। এটা অন্যায় হচ্ছে। ভালবাসা একটা দায়িত্ব। সেটা আগে বোঝা দরকার।”
উল্লেখ্য, প্রবল সমালোচনায় আক্রান্ত হয়ে ‘সামপ্লেস এলস’ তাদের পেজ থেকে গানের ভিডিওটি ডিলিট করে দেয় এবং জানায় “এই পাব সংগীত, সংস্কৃতি মানুষকে ভালোবাসে। কেবলমাত্র ভুবন বাদ্যকর গরীব বলেই তাঁর এই পাবে গাইবার যোগ্যতা নেই তেমনটা আমরা মনে করিনা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সংগীতের সন্তান।” অর্থাৎ শ্রেণীবিভাজনের বিরুদ্ধেই এমন একটি আয়োজন তাঁরা করতে চেয়েছেন।
খুব ভালো আয়োজন। কিন্তু সেটাই যদি প্রকৃত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ভিডিওটি তাঁরা ডিলিট করে দিলেন কেন? এই প্রশ্নটা থেকেই গেল। আজকের নিন্দা যে কালকের প্রশংসায় পরিণত হবেনা, কে বলতে পারে?