রেলের সফরকারী কমবেশি সবাই। অনেকেই রেলে নিত্য যাতায়াত করেন। চলতে চলতেই কিছু রোজকার দেখা জিনিস মনের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম তো দিয়েই যায়। ঠিক যেমন রেললাইনের গঠনপ্রণালী। দুটি সমান্তরাল ধাতব পাত আশ্চর্যজনক কৌশলে একের পর এক জুড়ে ট্র্যাক তৈরি করা হয়।
ঠিক তেমনই এটাও লক্ষ্য করে থাকবেন, রেললাইনের চারপাশ জুড়ে বড় আকারের স্টোনচিপস বা অসম আকৃতির খোয়া বিছিয়ে ভরাট করা থাকে। অনেকেই বোঝার চেষ্টা করেন এর কী কারণ। তাহলে বলা ভালো এর কারণটা ভীষণ প্রয়োজনীয়। রেল চলাচলের ট্র্যাক সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
ট্রেন চলাচলের এই ধাতব লাইনগুলির সাথে চলমান ট্রেনের চাকার Attachment খুবই প্রাসঙ্গিক, এটা কমবেশি সকলেই জানেন। এই লাইনের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমেই ট্রেন তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারে, প্রয়োজনে পথ পরিবর্তনও করতে পারে চাকার সাথে লাইনের সাযুজ্য রেখে। এটাকেই ট্র্যাক বলা হয়। আর এই ট্র্যাকগুলিকে সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনেই বিভিন্ন আকারের খোয়া বা স্টোনচিপস দিয়ে লাইনের চারপাশ ভরাট করে রাখা হয়। এই পাথরগুলিকে ট্র্যাক ব্যালাস্ট (Track Ballast) বলা হয়ে থাকে।
ট্র্যাক ব্যালেস্টের কাজ কী?
খেয়াল করলে দেখা যাবে এই পাথরের টুকরোগুলো অসমান ও এবড়োখেবড়ো আকৃতির হয়। যদি মসৃণ নুড়ি ব্যবহার করা হত তবে ট্রেন চলাচলের সময় সেগুলো স্লিপ করে বাইরে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। তাই এই বিশেষ ধরনের ট্র্যাক ব্যালাস্ট পাথর বিছানো হয়। রেলের একেকটি বগি ওজনে বিরাট ভারি, প্রতিদিন ট্র্যাকের ওপর এই ওজনদার বগিগুলি যাওয়ার ফলে মাটি বসে যেতে পারত, কিন্তু তা হয়না এই ট্র্যাক ব্যালাস্টের কারণে।
রেললাইনের মাটিতে আগাছার জন্ম হলে মাটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আর মাটি দুর্বল হলে ট্র্যাকগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই পাথরগুলি তাই আগাছা নিরোধকের কাজ করে। গাছগাছালি জন্মাতে দেয়না, বৃষ্টিতেও জল জমতে দেয়না, মাটির ওপর বর্মের মতোই কাজ করে লাইনকে ঘিরে রাখা এই নির্দিষ্ট পরিমাণে বিছোনো ট্র্যাক ব্যালাস্ট পাথরগুলি। ট্রেনের কম্পন ও ঘর্ষণের তীব্র আওয়াজও এই স্তুপীকৃত ট্র্যাক ব্যালাস্ট পাথরের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।