প্রশ্নটা বহুদিনের। তার উত্তরও নিরন্তর খুঁজে চলেছে বিজ্ঞান। স্বাভাবিক কৌতূহলেই মানুষের মনে প্রশ্নটা এসেছে, মানুষের সাথে অন্য প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য কেন হয়? মজা হল, এই প্রশ্নটাও মানুষেরই মস্তিস্ক প্রসূত। সেটাও বুদ্ধিমত্তার কারণেই। অবিরাম সংশোধন ও বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মানুষই মানুষের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজেছে, আর ক্রমশই একের পর এক প্রজন্মে জেনেটিক্স -এর দ্বারা প্রবাহিত করেছে যেমন শারীরিক বৈশিষ্ট্য, তেমনই বুদ্ধিগত গুণাবলী। কিন্তু অন্যান্য পশুদের ক্ষেত্রে সেটা হলনা কেন? বিবর্তন তো তাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে! তার কারণটা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের বিবর্তনের পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে।
প্রথমত অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষের মস্তিষ্ক আকারে বড় এবং ক্রিয়াপদ্ধতিও বেশ জটিল। শুধুই খেয়ে পরে বেঁচে থাকা নয়, প্রকৃতির হাজারো প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার অদম্য তাগিদেই মানুষের বৌদ্ধিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছে। সীমিত ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে গিয়ে প্রতিকূলতা জয় করতে হয়েছে মানুষকে। আর ততই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ । আর এই বিকাশ হয়েছে বায়োকালচার প্রজনন পদ্ধতিতে।
এই কারণেই বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অপরকেও বাঁচাবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল মানুষ , সেখান থেকেই গড়ে ওঠে পরিবার ও সমাজ।
বায়োকালচারাল অর্থাৎ জৈবসংস্কৃতি ধারণা অনুসারে মানুষ যখন বুদ্ধি খাটিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত, তারপরেই সে অন্য মানুষকেও বাঁচানোর কথা চিন্তা করে। সন্তানের বিকাশের প্রতিও ততই যত্নশীল হয়ে ওঠে। উল্টোদিকে অন্যান্য প্রাণীরা সন্তানের যত্ন নিলেও তা সাময়িক এবং সীমিত। এই প্রজননকে বলা হয় সমবায় প্রজনন।
মানুষের জৈবসাংস্কৃতিক প্রজননের মাধ্যমে একটি বা দুটি সন্তানের জন্ম হলে তাকে ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সমস্তরকম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, যত্নশীল বাবা মা এবং সমাজ পরিবেশ তাদের বুদ্ধিমত্তা পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত করে চলে। আর ক্রমাগত বিবর্তিত হয়ে চলে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ।