নির্বাসিতা গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও চিকিৎসক তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মাধ্যমেও রীতিমতো সরব। একইসঙ্গে তিনি উদ্দাম বেপরোয়া প্রেমিকাও ছিলেন বটে! সুতরাং এই বিষয়েও ফেসবুক ওয়ালে তাঁর ধারালো অক্ষর সমানভাবে আঁচড় রেখে চলে। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ টাইপের প্রেম নিবেদনের বিশেষ দিনটি সম্পর্কেও তাঁর মতামত বিতর্কের ঝড় তুলেছিল বছরখানেক আগেই, যখন এক প্রতিবেদনে তিনি ভ্যালেনটাইন’স ডে-কে ‘অসভ্য, বর্বর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এই বছরেও লেখিকার ধারণায় বড় একটা যে বদল হয়নি সেটা তাঁর ফেসবুক ওয়ালে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। বড়জোর ‘আছে থাক!’ এমনই একটা মনোভাব ধরা পড়েছে।
ভ্যালেনটাইন’স ডে সম্পর্কে যে তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটিতে ‘অসভ্য ও বর্বর’ বলে মন্তব্য তসলিমা রেখেছিলেন, সেটা সম্পর্কে ‘অ্যাভারেজ’ মানুষজনের কোনও ধারণাই সম্ভবত নেই, তবে লেখাটি অবশ্যপাঠ্য বলেই মনে করা যায়। ‘ভ্যালেনটাইন’স ডে’-র মূল ইতিহাসটির বিরোধিতা যদিও করেননি তিনি, জানিয়েছেন তার উদযাপনের পেছনে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথা। কারণ সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুদন্ডের পরেই ‘আহা মরি কী ভালোবাসা!’ এভাবে দিনটির উদযাপন শুরু হয়নি।
তসলিমার মতে দিনটি ভ্যালেনটাইনের নামে একদল চাপিয়ে দিয়েছে। ঐতিহাসিক নোয়েল লেন্সকির সূত্র ধরে তসলিমা লিখেছিলেন, “লুপারকালিয়া নামে এক উৎসব প্রাচীন রোমে প্রচলিত ছিল, যেটি ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উদযাপিত হত। এই উৎসবে নারীপুরুষ প্রচুর মদ্যপান করত, আর ইচ্ছেমতো সঙ্গী বেছে নিত। এখানে পুরুষরা দেবী লুপারকাসের উদ্দেশ্যে একটি ছাগল ও একটি কুকুর বলি দিত। তারপর মৃত ছাগলের চামড়া দিয়ে উৎসবে উপস্থিত মেয়েদের বেধড়ক মারধোর করত।তাদের বিশ্বাস ছিল, এই মার খেলে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়বে। এর সঙ্গে চলত বিপুল মদ্যপান। মদ খেয়ে মাতাল হতে হতে উলঙ্গ হতে হতে (stripping) লটারির পদ্ধতিতে যে যাকে পারত সেই পুরুষ ও মেয়েটি সঙ্গমে মেতে উঠত।”
তবে এই উৎসব রোমানদের মধ্যে খ্রীষ্টানধর্মের প্রভাবের ফলে আর মেনে নিতে পারছিলেননা বলেই জানিয়েছেন লেখিকা। যার ফলে এই উৎসবকেই মৃত ধর্মযাজক ভ্যালেনটাইনের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়। “পরবর্তীকালে শেকসপিয়র ও জিওফ্রে চশার ভ্যালেনটাইন ডে-কে রোম্যান্টিক আখ্যা দেন এবং পদ্য লেখেন।” এইভাবেই রূপান্তরিত হয় আজকের ভ্যালেনটাইন’স ডে।
তবে আজকের এই ‘হঠাৎ আবির্ভূত’ দিবসটির প্রতি ততটা বিদ্বেষী নন তসলিমা, শুধু তিনি এই দিবসের ‘বাণিজ্যিকরণের’ বিরুদ্ধে। ‘দেয়া-নেয়া’ প্রথার বিরোধী তিনি। আজকের এই বিশেষ দিনটায় ফেসবুকে পুরোনো কিছু স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন তসলিমা নাসরিন — যেখানে ‘প্রেম দিবস’ সম্পর্কে একটু তাচ্ছিল্যের সাথে গ্রহণীয় মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। তবে লেখিকার ক্ষোভ “দিবসের ঠেলায় মরি, ভালোবাসা দিবস। কাকে ভালোবাসবো! …চারিদিকে চোর, বাটপার, প্রবঞ্চক, প্রতারক, হাবিজাবি ….মাল! ভালোবাসা অত শাস্তা নাকি! চাইলেই কি প্রেম হয়?”
বরং তিনি ‘সেক্স দিবস’ কে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় মনে করেছেন। আসলে “শোয়ার জন্যেই সব” এমনটাই স্পষ্ট দাবি লেখিকার। “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা, এসবই আসলে ফোর প্লে!” আসলে উদ্দেশ্য “মেটিং ” এমনটাই মনে করেন চিকিৎসক লেখিকা তসলিমা নাসরিন!