রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার সরাসরি যুদ্ধ না করাটাকে মোটেই সহজ দৃষ্টিতে দেখতে রাজি হননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। পরোক্ষভাবে আমেরিকার কিছু দায়সারা সাহায্যকে সুবিধাবাদ এবং ভীরুতার নামান্তর বলেই মনে করেছেন এই মূহুর্তে কোনঠাসা একাকী যোদ্ধা ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি তিনি স্পষ্টতই ঘোষণা করে দিলেন — ইউক্রেন আর ন্যাটো-র অন্তর্ভুক্ত হতে চায়না।
পুরোনো সোভিয়েত ইউনিউয়ন ভেঙে ১৫ টুকরোয় বিচ্ছিন্ন হবার পর রাশিয়ার বিরোধী অবস্থান থেকে আমেরিকা সহ পশ্চিমি দেশগুলোর জোটবদ্ধ সংগঠনই ‘ন্যাটো'(NATO) নামে অভিহিত। বিশ্বের ৩০টি দেশ এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত, যারা একে অপরের বিপদের সময়ে অস্ত্র তুলে নিতে এবং সমস্ত সহযোগিতা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ইউক্রেনও ইতিমধ্যে সেই পথেই হাঁটতে শুরু করেছিল, ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হবার সিদ্ধান্তও একরকম নিশ্চিতই ছিল, কিন্তু তার আগেই যুদ্ধ শুরু করে দিল রাশিয়া। গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, “আমি বুঝতে পেরেছি ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতে ভয় পায়।আমি এমন একটি দেশের রাষ্ট্রপতি হতে চাইনা, যে রাষ্ট্র হাঁটু গেড়ে কোনোকিছুর জন্য ভিক্ষা করবে।”
উল্লেখ্য, আমেরিকা ও পশ্চিমি দেশগুলির সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ন্যাটো-র অন্তর্ভুক্ত হবার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল ইউক্রেন। রাশিয়ার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা, তাদেরই জল-হাওয়া-সংস্কৃতি-অর্থনীতিতে পরিপুষ্ট একটি দেশ ইউরোপীয় ঘরানার দিকে চলে যাবে! এটাই যে রাশিয়ার যুদ্ধ ঘোষণা এবং অতর্কিত আক্রমণের প্রধান কারণ, এদিন দোভাষীর সাহায্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছেন জেলেনস্কি। এই কারণেই যে যুদ্ধ তা তিনিও স্বীকার করেন এবং এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে আমেরিকা তথা ন্যাটো-র পলায়নী মানসিকতারও তীব্র সমালোচনা করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
এরপরই তাঁর ঘোষণা, ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত তুলে নিলেন তিনি। তিনি আরো জানান, ‘ডন-বাস রিজিওন’ নামে অভিহিত দুটি শহরের ব্যাপারেও রাশিয়ার সাথে আপসমুখী আলোচনায় বসতে তিনি রাজি। তবে তাঁরও কিছু বক্তব্য রয়েছে সেটা পুতিনকে শুনতে হবে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব ইউক্রেনের অন্তর্গত দুটি অঞ্চল ডনেৎস্ক এবং লুহানেৎস্ক (ডন-বাস রিজিওন)-কে স্বাধীন বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন পুতিন। তিনি এই দুটি অঞ্চলকে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রুশ প্রজাতন্ত্রী হিসেবে স্বাধীন করার দাবি জানিয়েছিলেন।
এই প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্য, “এই ছদ্ম প্রজাতন্ত্রকে রাশিয়া ছাড়া আর কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এই অঞ্চলগুলির ভবিষ্যত কী হবে, এই অঞ্চলের যেসমস্ত অধিবাসীরা ইউক্রেনের সাথে থাকতে চান তাদের কী হবে? এই বিষয়ে আমি রাশিয়ার সাথে আলোচনা করে সমঝোতা করতে রাজি।”
জেলেনস্কি আরো বলেন, “স্বাধীন বলে স্বীকার বা অস্বীকারের প্রশ্নের চেয়েও এই প্রশ্নগুলো বেশি কঠিন। সুতরাং পুতিনকে অক্সিজেন বিহীন বুদ্বুদে ভেসে থাকার বদলে আলোচনায় বসতে হবে।”