বিজয়দিবসে আবার বিতর্কিত পোস্ট কঙ্গনার, প্রতিবাদে মুখর বাংলাদেশি শিল্পীরা

দেশ, জাতি, ধর্ম, ইতিহাস–বিষয় যাই হোকনা কেন, কঙ্গনাকে মুখ চালাতে হবেই। কদিন আগেই ১৯৪৮ সাল নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন, এবার বাংলেদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারতের জয় বলে উল্লেখ শুধু নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের ধ্বজা তুলে ধরেছেন! এতে দোষের কিছু নেই, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বন্ধুশক্তি হিসেবেই সঙ্গী হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কঙ্গনা রানাওয়াতের পোস্টে বাংলাদেশের অগনিত শহীদ যোদ্ধাদের অবদানের উল্লেখ কোথায়?

বরং এই পোস্ট এমনভাবেই লেখা, যেন ১৯৭১ এর যুদ্ধে একমাত্র কৃতিত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনীরই! স্বাভাবিকভাবেই এই পোস্ট বাংলাদেশের আত্মসম্মানে আঘাত দিয়েছে। আর তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের শিল্পীরা।

১৬ ডিসেম্বর কঙ্গনা রানাওয়াতের ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। যেখানে তিনি, “১৬ ডিসেম্বর ২০২১ সাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয়দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী” বলে উল্লেখ করে “ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্সের অসম সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতি স্যালুট ” জানিয়েছেন। এরপর হ্যাশট্যাগ দিয়ে মেনশন করেছেন– বিজয় দিবস, সোনালি বিজয়, অমৃত মহোৎসব।”

এছাড়াও ওইদিন ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে নিজের ছবি শেয়ার করে ভারতের সেনাবাহিনী এবং ভারতের বিজয় বলেই উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের আবেগে তীব্র আঘাত করেছে। যার জবাবে এবার মুখ খুললেন বাংলাদেশের শিল্পীরা।

বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী কঙ্গনার এই বিতর্কিত ও অর্ধসত্য ভরা ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সেই আছড়ে পড়েছে প্রতিবাদ। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ এবং নবাগতা অভিনেত্রী নিশাত নাওয়ার সালওয়া কঙ্গনাকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আপনার উচিত বাজে মন্তব্য করার আগে ইতিহাস সম্পর্কে আরও জ্ঞান সংগ্রহ করা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা করেছিল ঠিকই, আমরা তার জন্য প্রশংসা করি এবং আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ১৯৭১ সালে আমরা ৩০ লাখ বীর যোদ্ধাকে হারিয়েছি , যাঁরা মাতৃভূমির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ এমনই এক দেশ যার জন্ম অনেক লড়াই এবং স্বাধীনতা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে এসেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা আমাদের বিজয় অর্জন করেছি।”

কঙ্গনাকে পরামর্শ দিয়ে সালওয়া আরো লিখেছেন, “আমাদের আবেগ, চোখের জল, সাহস এবং সর্বোপরি দেশপ্রেম, আমাদেরর লালিত বিজয়দিবস ১৬ ডিসেম্বরের ফলাফল। তাই দয়া করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো বন্ধ করুন।”

বাংলাদেশের নায়ক জয় চৌধুরী কঙ্গনার উদ্যেশ্যে লিখেছেন, “দয়া করে ইতিহাস বিকৃত করবেননা। এটি ভারতের নয়, পাকিস্তানের বিরদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী। ভারত আমাদের সাহায্য করেছে, এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এই বিজয় অর্জনের জন্য আমরা প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমাদের আবেগে আঘাত করবেননা। ”

কঙ্গনা রানাওয়াতের এই বিতর্কিত পোস্টে ক্ষুব্ধ শিল্পীমহলের অনেকেই।এমনকি টলিউডের অনেক শিল্পীও উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, কঙ্গনা রানাওয়াতের প্রায় সমতুল্য আরো একটি ভুল করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনিও বাংলাদেশের বিজয় গৌরবে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। তবু নিজের বক্তব্যে “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে লড়াই” বলে উল্লেখটুকু করেছেন, এবার মোদীজির অনুগামী পরম ভক্ত নায়িকা কঙ্গনা রানাওয়াত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘বাংলাদেশকেই’ বাদ দিয়ে দিলেন! ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞানতা! নাকি ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃতি?
সচেতন মহলের অনেকেই সে প্রশ্ন তুলেছেন।