কৃষ্ণনগরের ৩৪ নং জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ অবরোধে পথ আটকাবার ফলে মৃত্যু হল ৭ বছরের শিশুর।
করোনা পরিস্থিতির কারণে জগদ্ধাত্রীপূজোর বিসর্জনে কিছু নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়, যার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে অবরোধে নামেন যুবক যুবতী সহ এলাকার অসংখ্য মানুষ।
টায়ার জ্বালিয়ে ভাঙচুর চালাবার ফলে কার্যতই জাতীয় সড়কে বিশাল যানজট তৈরি হয়। এমনকি টানা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজানোর পরেও পথ করে যেতে দেওয়া হয়নি অ্যাম্বুলেন্সটিকে। যার ফলে বিনা চিকিৎসায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা গেল ৭ বছরের ওই শিশু।
কৃষ্ণনগরের সাবেক ঐতিহ্য অনুযায়ী বিসর্জনের সময় আগে প্রতিমাকে রাজবাড়ী প্রদক্ষিণ করিয়ে তারপর সাঙে (বাঁশের তৈরি বিশেষ মাচা) চড়িয়ে বেহারার কাঁধে করে বয়ে নিয়ে গিয়ে জলঙ্গীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। কৃষ্ণনগরের অন্তত ৩০-৩৫ টি বড় পূজো এখনও এই প্রথার অনুসারী।
তবে কোভিড পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আগের বছরের মতো এবারেও ভিড় করে প্রতিমা প্রদক্ষিণ ও সাঙে বিসর্জনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এদিন প্রথমে কৃষ্ণনগর পুরসভার সামনে প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কৃষ্ণনগরের অসংখ্য মানুষ। তাদের দাবি, “ভোটের বেলায় কোনওরকম বিধিনিষেধ নেই অথচ পূজোর বেলায় এত নিয়ম কেন?”
এরপর ঘেরাও হয় কোতোয়ালি থানা। বিক্ষোভ মিছিল ক্রমশ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দিকে এগোয়। মঙ্গলবার রাতে পথ আটকে ভাঙচুর, আগুন জ্বালিয়ে চার ঘন্টা চলে ওই অবরোধ। স্বাভাবিক ভাবেই যানজটে নাকাল হন প্রচুর মানুষ।
ওই যানজটেই আটকে পড়েছিল কলকাতাগামী অ্যাম্বুলেন্স। ৭ বছরের শিশু সাকিবুল শেখকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মালদা থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসছিলেন তার বাবা-মা। তখনও তার নাকে অক্সিজেনের নল ছিল। দ্রুত হাসপাতালে না পৌঁছলেই নয়। কিন্তু একটানা সাইরেন বাজানো সত্ত্বেও পথ করে দেওয়া হলনা, ওই মৃত্যুপথযাত্রী শিশুর বাবা-মায়ের অনুনয় বিক্ষোভকারীদের কানেই পৌঁছলোনা! তারা তখন যৌথভাবে উৎসবের দাবিদাওয়ায় মত্ত। প্রাণ চলে গেল শিশুর।
এরপরই অবশ্য অবরোধ দমনে নামে পুলিশ। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ওপর অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।