এপার বাংলার মেয়ে সায়নী অতশত বোঝেননা কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কেন প্রতিবাদ। গোটা ব্যাপারটাই ঘটেছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। বাংলাদেশের ‘মৌলবাদী চক্রান্তের’ জেরে দুর্গামূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা চরম ব্যথিত করেছিল তাঁকে। একটি মেয়ের ছবি এঁকেছিলেন –কপালে ত্রিনয়ন, চোখভরা জলে সে চেয়ে রয়েছে সুমুখের পানে। আর সেই ছবিই বাংলাদেশে হিংসার প্রতিবাদ স্বরূপ তুলে ধরলেন বাংলাদেশের মিছিলে সেখানকার এক তরুণ ।
ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী সায়নী দত্ত থাকেন নিউ ব্যারাকপুরে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকার নেশা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেই দুর্গারূপি ব্যথিত একটি মেয়ের ছবি এঁকে ইন্টারনেটে আপলোড করে দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের এক তরুণ মিঠুন ধর সেই ছবিটিই ইন্টারনেট মারফত দেখেন। ছবিটি মুগ্ধ করে তাকে। এরপর তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী , “ছবিটা দেখে মনে হয়েছিল এইটাই প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে উপযুক্ত হবে”। তখনও মিঠুন জাানতেননা ছবিটি কার আঁকা। ছবিটা তৎক্ষণাৎ বড় করে প্রিন্টআউট করে তিনি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন। পরে অবশ্য জেনেছেন ওই ছবিটা এপার বাংলার এক মেয়ের আঁকা। আর সায়নী! তিনি তো ভাবতেই পারেননি তাঁর আঁকা দুু্র্গার ছবি ওপারবাংলার প্রতিবাদের ভিড়ে জেগে উঠবে। জানতে পেরে খুব খুশী। সায়নীর মতে, “অত্যাচারিত সব মেয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে দুর্গা, সে জেগে উঠবেই”।
এমন করেই আগেও বহুবার এপার-ওপার মিলে গেছে। ২০১৪ সালে যাদবপুরের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে শ্লোগান “হোক কলরব ” নিয়ে গান বেঁধেছেন ওপার বাংলার সঙ্গীত শিল্পী অর্নব। এই প্রজন্মের এক প্রতিনিধি হলেন সায়নী। অজান্তেই তার রঙ তুলির ছোঁয়ায় এপার ওপার মিশিয়ে দিয়েছেন। তাই তাঁর আরও বেশি করে জানা দরকার — কীভাবে বাংলাদেশে বাংলাভাষা নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে লড়াই করেছিলেন হিন্দু মুসলমান।
সায়নী আরও জানলে খুশী হতেন, এবারেও ওপার বাংলায় ধর্মীয় মৌলবাদী হিংসার প্রতিবাদে একসাথে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন হিন্দু বোনের পাশাপাশি কোনো এক মুসলমান ভাই। কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় যেমন হুগলীর আরামবাগে মৌলবাদী হিংসার প্রতিবাদে নিজে হাতে রঙতুলি দিয়ে প্ল্যাকার্ড লিখে,পথসভা করেছেন সেখানকার ছাত্রছাত্রী, তরুণ তরুণীরা।
রাস্তায় জনে জনে ডেকে বুঝিয়েছেন — কেন এই হিংসা! আর রাস্তার পথচলতি লোক জেনে অবাক হয়েছেন ‘হিন্দু মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে একজন মুসলিমও অংশগ্রহণ করে!’
সায়নীকেই তো বেশি করে জানতে হবে — এই শহরেরই এক কোণে একদল মুসলমানদের দ্বারা দুর্গোৎসব আয়োজিত হয়! তবেই তো সায়নীর রঙতুলি সার্থক হয়ে উঠবে। আরও অন্তর থেকে বাংলার এই মেয়ে উপলব্ধি করবেন — কেন তাঁর অশ্রুভরা দুর্গার চোখ দেখে, ওপারের এক তরুনের হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠল!