কেন কলকাতা তথা এরাজ্য ছাড়ে লোকজন চিকিৎসা করাতে ভেলোর ছোটেন, এ প্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,” ভেলোরে এত ভিড় কেন, এর উত্তর লুকিয়ে হাসপাতালের ওই বিলে”।
ব্যারাকপুর নিবাসী বিকাশ চন্দ্র মন্ডলের করা এক অভিযোগের ভিত্তিতেই এই প্রসঙ্গ উঠে আসে। ব্যারাকপুরে এক বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বিকাশ নামের ওই ব্যক্তি স্থানীয় দুএকটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যেখানে মাত্র ১০ দিনে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বিল ধরানো হয়। ওই খরচের মধ্যে তুলো, ব্যান্ডেজ, ড্রেসিং বাবদ দেখানো হয়েছে ১ লক্ষ টাকা!
শুধু তাই নয়, ওই হাসপাতালের চিকিৎসক এত কিছুর পর জানান পা বাদ দিতে হবে। ১০ দিনে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বিল ধরানো হয়। ওই খরচের মধ্যে তুলো, ব্যান্ডেজ, ড্রেসিং বাবদ দেখানো হয়েছে ১ লক্ষ টাকা! শুধু তাই নয়, ওই হাসপাতালের চিকিৎসক এত কিছুর পর জানান পা বাদ দিতে হবে।
বিকাশবাবু তৎক্ষণাৎ বন্ডে সই করে বেরিয়ে এসে ভেলোরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ভেলোরের বিখ্যাত ক্রীশ্চান মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করে সুস্থ হন তিনি। পা বাদ দিতে হয়নি। ১৯ দিনে সেখানকার মোট খরচের বিল হয় ১ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা।
এই বিল নিয়েই স্বাস্হ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবী করে অভিযোগ করেন বিকাশ মন্ডল। পাশাপাশি ভেলোরের বিলটি খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেন, ভেলোরের এই বিল দৃষ্টান্ত স্বরূপ এ রাজ্যের প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হবে। যাতে তারা দেখে নিজেদের ত্রুটি খুঁজে বার করে এবং সংশোধন করার চেষ্টা করে।
এ রাজ্য ছেড়ে কম খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভেলোর যাওয়ার ঘটনা আকছার ঘটে। আজ বিকাশ মন্ডলের অভিযোগের শুনানি করতে গিয়ে বিষয়টি আরও একবার প্রকাশ্যে এল।
যদিও এর পাল্টা এক বিবৃতিতে পূর্ব ভারতের স্বাস্থ্য অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, ” দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার প্রতি অভিযোগ এখানকার বেসরকারী হাসপাতাল বেশি টাকা নেয়, এ অভিযোগ সত্য থেকে দূরে”। রূপক যদিও বিবৃতিতে স্বাস্থ্য কমিশনের শুনানির কথা উল্লেখ করেননি। তবুও বোঝা যায় এর সাথে ওই মামলার সংযোগ রয়েছে। তিনি বলেছেন,”ভেলোরের সিএমসি একটি ট্রাস্টের দ্বারা চলে। সেখানে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য সব রাজ্যের মতোই এরাজ্যেও বেসরকারি হাসপাতালের খরচ প্রায় এক”।
এই কথা বলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া পরোক্ষে কলকাতার মানুষদের ধারণা ভ্রান্ত এমন ইঙ্গিতই করেছেন। রাজ্যস্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিও তাঁর বক্তব্য, “কর্তৃপক্ষের উচিত ব্যাপারটা বুঝিয়ে কলকাতার মনোবল বৃদ্ধি করা”। কিন্তু মনোবল বৃদ্ধিটা ঠিক কী? চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া? এটা রূপক বড়ুয়ার কথায় ঠিক পরিস্কার নয়।