গোসাবার ভোট মানচিত্রে একাধিক রঙবদলে এমন দশা যে– প্রার্থী চেনা দায়। কাল যিনি বিরোধী দলে ছিলেন আজ তিনি কাঁধে হাত রেখে পাশাপাশি চললেন প্রচারে। কাঁধে রাখা সেই হাত পট্ করে ঘাড় না মটকে দেয়, সর্বক্ষণ সেই ভয়! এ আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগেই কি পেয়েছিলেন বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর! তাই কি জীবিত থাকতেই নিজের তিন তিনখানা মূর্তি বানিয়ে রেখে গেছিলেন?
হ্যাঁ এলাকার বিরোধিতা, দলের বারণ সত্ত্বেও নিজের পয়সায় তিনখানা মূর্তি বানিয়ে গেছেন তিনি। জয়ন্তকে তাড়া করে বেড়াত রাজনৈতিক আক্রমণ নাকি অন্তর্ঘাতের ভয়! সে প্রশ্ন করে আজ লাভ নেই, কেননা করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান ১৯ জুন। জয়ী হবার দেড়মাসের মুখেই তাঁর মৃত্যুর কারনেই গোসাবায় উপনির্বাচন হচ্ছে। তবে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ৬৫ বছরের প্রভাবশালী নেতা জয়ন্ত নস্করের দাপটে যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শত চেষ্টাতেও মাথা তুলতে পারেনি, এবার তা মাথা তুলতেও পারে!
জল্পনা হয়েছিল নতুন প্রার্থী নিয়েও। কে হবে জয়ন্তর বদলে প্রার্থী, এই নিয়ে গোসাবার ব্লক তৃণমূল সংগঠনে নানা মত তৈরি হয়। প্রয়াত বিধায়কের ছেলে বাপ্পাদিত্য সেই সময় অঞ্চলে হাঁকডাক করে বেড়াচ্ছিলেন খুব, প্রাথমিকভাবে তাই মনে হয়েছিল তিনিই প্রার্থী হতে চলেছেন। কিন্তু না, শেষপর্যন্ত অনুমান ব্যর্থ হয়। গোসাবায় জয়ন্ত নস্করের শূন্যপদ পূরণ করতে প্রার্থী হলেন সুব্রত মন্ডল।
কিন্তু শূন্যস্থান সত্যিই পূরণ হবে তো! সেটা তৃণমূল না জিতলে নিশ্চিত করে বলা যায়না। কারণ, ১) প্রাক্তন পঞ্চায়েত উপপ্রধান জয়ন্ত নস্কর এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং তৃণমূল নেত্রীর শক্তিশালী স্তম্ভ স্বরূপ ছিলেন, আর ২) বিধানসভায় হেরে যাওয়া বিজেপি প্রার্থী বরুণ প্রামাণিকও বেশ ভালো ভোটই পেয়েছিলেন সেসময়।
এই বরুণ প্রামাণিকের একটু কিসসা আছে। ছিলেন তৃণমূলে, এবং জয়ন্ত নস্করের কাছের মানুষ বলেই পরিচিতি ছিল। বিধানসভার আগে পাল্টি খেয়ে বিজেপিতে গিয়ে জয়ন্তর বিপরীতেই ভোটে দাঁড়ান। হেরে যাবার পর আবার যথারীতি তৃণমূলেই ফিরে আসেন।
এখন বরুণ ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ বেমালুম ভুলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর হয়েই প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। বলছেন, ” জয়ন্তবাবুর সাথে বিবাদের জেরেই আমি তৃণমূল ছেড়েছিলাম।এখন সে বিবাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে তৃণমূলে ফিরে এসেছি। দলের প্রার্থীকে জেতানোই এখন আমার লক্ষ্য”।
কিন্তু যত সরলভাবে কথাগুলো বলেছেন বরুণ প্রামাণিক, তত সহজে যে হজম হবার নয়! কেমন যেন যেন দুয়ে দুয়ে চারের গন্ধ পাচ্ছেন সন্দেহীরা। আর এই ক্রমাগত রঙ বদলের খেলায় শত্রুমিত্র চেনা দায় হয়ে যায়না কি? গোসাবার হাজার সমস্যা, ঝড় বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এই চিন্তাও বড় হয়ে উঠছে।
এই অবস্থাতেই ৩০ অক্টোবর সুব্রত মন্ডল বনাম পলাশ রাণার লড়াই। দেখা যাক ফলাফল কী দাঁড়ায়।