দিলীপ ঘোষকে সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করেছে তাঁর দল বিজেপি। এটাকে চালু ভাষায় প্রোমোশন বলাই যায়। কিন্তু এই দিনটায় ততটা আলোচনা হচ্ছেনা দিলীপ বাবুর রাজনৈতিক প্রোমোশন নিয়ে, বরং বেশি আলোচিত হচ্ছে রাজ্যসভা থেকে তাঁকে বহিস্কার ।
বিষয়টা লক্ষ্য করার মতো। কারণ যেভাবে তাঁর দল এই রাতারাতি পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নিল, তাতে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। উঠছেও। এখনও তো রাজ্যসভার ১৫ মাস মেয়াদ ছিল, তাহলে আচমকা এই সিদ্ধান্ত কেন? তাতে জিজ্ঞাসু মহলের সামনে একটা উত্তরের সম্ভাবনাই ঘুরে ফিরে আসছে — পশ্চিমবঙ্গের সংগঠনে দিলীপ ঘোষের প্রয়োজন কি তবে ফুরিয়ে গেছে ? নাকি দল চাইছেনা দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের সংগঠনে থাকুন!
দিলীপ ঘোষ মহাশয় আজ হাসিমুখে দলের সিদ্ধান্তে খুশি এমন ভাবই দেখাচ্ছেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির অনেকেই যে দিলীপের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন সেটা তিনিও জানেন। দল কি সে কারণেই তাঁর নিজের পদ থেকে সরিয়ে দিল? এ প্রশ্ন হয়তো তিনি নিজে করতে পারছেননা, বরং বলছেন এব্যাপারে তিনি আগে থেকেই জানতেন! যদি জেনেই থাকেন, সেটা গত কয়েকদিনের মনোভাবে ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ পায়নি কেন? এই জানা অজানার মাঝে একটা ধোঁয়াশা আছে বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞরা।
পূর্ব অভিজ্ঞতা স্মরণ করে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন মুকুল রায়ের কথা। দিলীপ ঘোষকে যে পদে উন্নিত করা হল, সেই সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদে এর আগে মুকুল রায় ছিলেন। সম্প্রতি মুকুল রায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা যে অত্যন্ত খারাপ সেকথা আর অজানা নেই। প্রশ্ন তাই উঠছেই — মুকুল রায়ের পর আর এক বাঙালি রাজনৈতিক নেতার অবস্থাও তেমন হয়ে উঠবেনা তো?
এটা পদোন্নতি! নাকি পানিশমেন্ট? মুকুল রায়ের উদাহরণ টেনে অভিজ্ঞ মহলের অনেকেই কিন্তু বিজেপির ওই দিল্লীর ওই ‘উচ্চপদ ‘ সম্পর্কে এমন তুলনাই দিয়েই থাকেন।
মসনদে বসিয়ে দেবার অছিলায় কার্যত ব্রাত্য করেই দেওয়া হয়েছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। আদ্যোপান্ত এক বাঙালি সংগঠককে বাংলার বাইরে পাঠিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক সংস্রব ও আলোচনা থেকে দূরে সরিয়ে শুধুমাত্র দেওয়া হয়েছিল একটা গালভারি করা উচ্চ পদের নাম — সর্বভারতীয় সহসভাপতি।
মুকুল কি তাতে সুখি হয়েছিলেন? উত্তর মুকুলের এখনকার পরিণতিই বলে দিচ্ছে।
দিলীপ ঘোষও এই বাংলার বাঙালি সংগঠক। বিজেপির বাংলায় যতটুকু বিস্তার হয়েছে সেটা তো দিলীপ ঘোষের হাত ধরেই! কেন তাহলে এই হঠাৎ অপসারণ!
দিলীপ ঘোষ কি পারবেন দিল্লী গিয়ে সহ সভাপতি হয়ে বাংলা থেকে দূরে থাকতে? দিলীপ বাবুর যত প্রশংসা যত নিন্দা যত কটূক্তি সমালোচনাই করুক সমর্থক বা বিরোধীরা, এই সব নিয়েই তো বাংলার জনপ্রিয় বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ! সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হয়ে সেই দিলীপ ঘোষ হারিয়ে যাবেননা তো?
এই প্রশ্নেই সন্দিহান রাজনৈতিক মহল।