ভবানীপুরে মমতা ব্যানার্জীর বিপুল জয়ের পর এবার দিল্লী বিজয়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু নিজের রাজ্যেই নয়, অন্যান্য রাজ্য থেকেও যে হারে শুভেচ্ছা বার্তা পেয়ে চলেছেন মমতা ব্যানার্জী, সেটাই ইঙ্গিত করছে — দিল্লী আর বেশি দূরে নেই।
এমনটাই মনে করছে দল।
প্রশ্ন এখন বহুমুখী। ২০২৪ এর লক্ষ্যে ঠিক কেমন হবে বিজেপি বিরোধী জোট? কংগ্রেস থাকবে কি? বামেরাও আসবে কি? নাকি আরও দল এসে এককাট্টা হবে তৃণমূলের ছাতার তলায়? নানান প্রশ্নে রাজনৈতিক মহল সরগরম।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে রেকর্ড ব্রেকিং জয়ের পর দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফ থেকে মল্লিকার্জুন খড়্গে ও স্থানীয় কিছু নেতৃবৃন্দ অভিন্দন জানালেও আজ সকাল পর্যন্ত স্বয়ং সনিয়া গান্ধী নিজে কোনোরকম বার্তা পাঠাননি। সংশয় ঘনাচ্ছে এখানেই। দলীয় মুখপত্রে কংগ্রেসকে যেভাবেই আক্রমণ করেছিল তৃণমূল, এই নীরবতা কি তারই ফলশ্রুতি?
তৃণমূল যদিও নিজেদের মনোভাবে অনড়। তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যাগ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন অসন্তোষের কথা। বলেছেন, “অধীর চৌধুরী এবং সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা মমতাকে চব্বিশ ঘন্টা ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে গেছেন। তাঁরা যে বিজেপির তাঁবেদার এটা বুঝতে পেরেছে মানুষ, আর তাই জঙ্গীপুরের মতো আসনেও ৯২ হাজার ভোটে হারতে হয়। বিধানসভা থেকে কংগ্রেস ও সিপিএম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে”।
গত নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস সমঝোতাই যে তৃণমূলের বিরাগের কারণ সেটা স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল, অপরদিকে উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের দ্বন্দ্বও একই রকম প্রকট। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গে যা কেউ কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তারই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সিপিএম পলিটব্যুরোর নেতৃত্ব সীতারাম ইয়েচুরি নিজেই প্রকাশ করেছেন — মমতা ডাকলে তাঁরা বিজেপি বিরোধী জোটে যেতে রাজি।
তাই বাম-কং-তৃণমূল জোট যেমনই হোকনা কেন, নেতৃত্ব যে মমতা ব্যানার্জীই দিতে চলেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যেয়ের আজকের বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট। বলেছেন, “একজন নারী কীভাবে সর্ব শক্তি দিয়ে ঝাঁপানো বিজেপিকে রুখে দিতে পারে সারা দেশে তার একটিই উদাহরণ তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী বিজেপি বিরোধী মুখ”।
অন্যান্য দলগুলি থেকেও প্রায় একইরকম বার্তা পেয়েছেন মমতা ।
এনসিপির নেতা শরদ পাওয়ার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতাকে। এছাড়াও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান ডিএমকের দুই নেতৃত্ব স্টালিন ও কানিমোঝিও। কানিমোঝি বলেন, “মমতা ব্যানার্জী শুধু তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর আসন ধরে রাখলেন তাই নয়, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির আশাকেও উজ্জ্বল করে তুললেন “। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে বলেছেন,”মমতা ব্যানার্জীর এই বিপুল জয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখায় প্রত্যয়কে তুলে ধরেছে “।
প্রত্যেককে ব্যক্তিগত ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি মমতা নিজের ট্যুইটারে লিখে প্রতিটি রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন , “এক সঙ্গে দেশের সংবিধান রক্ষা ও দেশবাসীর কল্যাণের জন্য লড়াই করতে হবে”।
ট্যুইটারে দেওয়া এই বার্তা এবং ভিনরাজ্যের বিরোধী দলগুলির প্রতিক্রিয়া মমতা ব্যানার্জীর দিল্লী জয়ের পথকে মসৃণ ও প্রত্যয়কে দৃঢ় করার দিকেই ইঙ্গিত করছে।