গতকাল ‘সুশাসন দিবসে’ উন্নত পরিকাঠামোর ভিত্তিতে ২০২০-২১ বছর অনুযায়ি কোন রাজ্য কোন অবস্থানে রয়েছে তারই তালিকা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই তালিকা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। তাতে দেখা যাচ্ছে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাট। আর সবার নিচে স্থান পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। স্বাভাবিক ভাবেই এই রিপোর্টকে একরকম বিজেপির মনগড়া বলেই আখ্যা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। আর বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই রিপোর্টকে বিজেপির ভোটরাজনীতির হাতিয়ার বলেই মনে করছেন।
পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে এরাজ্যে বিজেপির বেহাল অবস্থা। আর ২০২০-২১ গোটা বছরটাই জাতীয় রাজনীতির স্পটলাইটে ছিল কৃষিবিল প্রত্যাহার আন্দোলন। চলতি বছরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যেটা আরও আগেই করা উচিত ছিল বলে গেরুয়া শিবিরেও অনেকে মনে করছেন। কেননা সেটা করলে আগামী নির্বাচনের ভোটপ্রচারে কেন্দ্রের সমর্থনে ইস্যু তৈরি করা যেত। এখন তা করতে যাওয়া মানেই পরোক্ষে বিজেপির দুর্বলতাই প্রকাশ করবে। তাই এমূহুর্তে সবদিক থেকেই নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করছে বিজেপি। সুশাসনের রিপোর্টেই তার প্রভাব পড়েছে বলেই অনেকের মত। আসন্ন নির্বাচনে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই কৃতিত্ব জাহির করে সর্বোচ্চ স্থানে বিজেপি শাসিত গুজরাট! আর বিহার ও উত্তরপ্রদেশের চেয়েও নিচের স্থানে পশ্চিমবঙ্গ!
সাধারণত এই রিপোর্ট দশটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়– ১)কৃষি, ২)শিল্প, ৩)শিক্ষা, ৪)জনস্বাস্থ্য, ৫)পরিকাঠামো, ৬)আর্থিক পরিচালনা, ৭)সামাজিক ন্যায় ও উন্নয়ন, ৮)আইন ও জননিরাপত্তা, ৯)পরিবশ এবং ১০)জনমুখী শাসন।
সেই নিরিখেই এবছরে ১২.৩ শতাংশ সূচক অনুযায়ী সবার শীর্ষে গুজরাট। আর সর্বনিম্ন ৬.৬ সূচক অনুযায়ী সবার নিচে পশ্চিমবঙ্গ।
এই রিপোর্ট প্রকাশ করে অমিত শাহ বলেছেন,”নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকার এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি যা জনতার চোখে ভালো দেখায়। বরং জনগণের জন্য যা ভালো সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এমনকি সে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন সত্ত্বেও পিছপা হয়নি কেন্দ্র।”
এই আপাত স্ববিরোধী মন্তব্যের আড়ালেই কি আসল জট লুকিয়ে! কেননা এই বক্তব্যে ‘জনতার চোখে ভাল না দেখানো’ এবং তা অগ্রাহ্য করাকে একনায়কত্বের দৃষ্টিভঙ্গি বলেই কি মনে হয়না? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের একাংশ তাই মনে করছেন।
আর রাজ্যসরকারের তরফে তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় প্রতিক্রিয়া দিয়ে সোজাসুজিই বলে দিয়েছেন, “এ হল সরকারের মনগড়া রিপোর্ট। সামনেই নির্বাচন। তাই বিজেপিশাসিত রাজ্যের ভালো ফলগুলোকে সামনে তুলে ধরার কৌশল।” সবশেষে তাঁর সংযোজন, “মনে রাখতে হবে, কদিন আগেই শিক্ষাক্ষেত্রে দেশে প্রথম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ।”