পিয়ানোয় বেসুরো সুর; নৃত্যের তাল কেটে যাচ্ছে– এমনই নানারকম কানাকানি ছড়াচ্ছেন নিন্দুকেরা। শোভন-বৈশাখি ছন্দময় লাইভ টেলিকাস্টে উড়ো হাওয়ার মতো ছুটে এসেছে পুরভোট। ভোট সমস্যা নয়, সমস্যা হয়ে দাঁড়ালেন শোভনবাবুর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে ‘শিখন্ডি ‘-র মতো দাঁড় করিয়েই নাকি জব্দ করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস!
যাঁরা এখনও বুঝতে পারছেননা সমস্যাটা কী, তাঁদের জন্য পর্দা তুলে জানানো হচ্ছে যে, আসন্ন পুরভোটে শোভন চট্টোপাধ্যায়েয় ওয়ার্ডেই তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে তৃণমূল! আর শোভনবাবুকে করেছে জাস্ট অবহেলা!
এই আঘাতেই টঙ্কার লেগেছে সেতারের তারে। শোভন ক্ষুব্ধ, সঙ্গে বিক্ষুব্ধ বৈশাখী ঝড়! প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় উগরে দিলেন জমিয়ে রাখা ক্ষোভ, “আমি গ্রেপ্তার হয়েছি, আমাকে অনেকসময় মমতার পরিবারের বিরুদ্ধে বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বলিনি। সব নিজের কাঁধে নিয়েছি। যাঁরা বলেছেন তারা পুুরস্কৃত, আর আমি বহিস্কৃত, বাহ্!”
মমতার পরিবার নিয়ে শোভন বাবু কী কী বলতে পারতেন কিন্তু বলেননি সে আগ্রহ রাজনৈতিক মহলে তোলা রইল; আপাতত তিনি নিজেই পারিবারিক সংকটে। কেননা দাম্পত্য কলহ রাজনীতির ময়দানে নেমে এসেছে, যুদ্ধ আসন্নপ্রায়। শোভনবাবুর মতে, “তৃণমূল রত্না চট্টোপাধ্যায়কে সামনে রেখে শিখন্ডি করে আমাকে শিক্ষা দিতে চাইছে”। সুরে সুর মেলাতে চেয়েছেন বন্ধুনি বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রশ্ন করেছেন, বিজেপি ত্যাগ করার পরেও তৃণমূলের এমন ‘অশোভনীয়’ আচরণ কেন?
অপরদিকে, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের এই মূহুর্তের তৃণমূল প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ওনাকে তিরস্কার করা হয়নি, উনি ছেড়ে গেছেন। চাইলে দলনেত্রীর পায়ে ধরতে পারতেন!’
এখানে ‘ছেড়ে যাওয়া’ কথাটিতে ব্যাপক মানে খুঁজতে চাইছেন নিন্দুকের দল। তাঁরা বলছেন এই ছেড়ে যাওয়া একদিকে যেমন শোভন-বৈশাখির বিজেপিতে যাওয়া, তেমনই ঘর ছেড়ে যাওয়াকেও নাকি ইঙ্গিত করছে? আর এই ইঙ্গিতের পাল্টা জবাব দিতেই রত্নাকে নোটিশ পাঠালেন বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়, বলেছেন ‘অবিলম্বে রত্না চট্টোপাধ্যায়কে বেহালার বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। বাড়িকে নির্বাচনী কেন্দ্র বানানো চলবেনা’।
উল্লেখ্য, কিছু মাস আগেই কোটিখানেকেরও বেশি টাকা দিয়ে বেহালায় ইন্দিরা দেবী রোডে অবস্থিত শোভনের বাড়িটি কিনে নিয়েছেন বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়, তাই এই নোটিশ। দুঃখের সাথে বৈশাখি বলেছেন,”বিধানসভার সময় আমরা নাহয় বিজেপিতে ছিলাম, এখন তো নেই। তারপরেও এই সিদ্ধান্ত কেন? ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে রত্নাকে টিকিট দেওয়া আমাদের ব্যথা দিয়েছে।শোভনদা রাজনীতি থেকে দূরে। পথই পথ দেখাবে “।
মুশ্কিল হল তৃণমূল কংগ্রেস শোভন – বৈশাখির ব্যথা বেদনায় গুরুত্ব না দিয়ে ব্যথা আরও বাড়ানোর জন্য শোভনের ওয়ার্ডেই রত্নাকে টিকিট দিয়েছে! তবে রত্না চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “ওনার (শোভনের) বিরুদ্ধে কাউকে শিখন্ডি করা হয়নি, আমাদেরও অনেক ব্যথা আছে “।
আর ব্যথা আছে বলেই বৈশাখির নোটিশের জবাবে রত্না সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছেন, “যেভাবেই বাড়ি কিনুন না কেন, এ বাড়ির মালিক রত্না চট্টোপাধ্যায়। ক্ষমতা থাকলে আসুন!”
অর্থাৎ বাড়ি তিনি ছাড়ছেন না। জঙ্গ-এ-অ্যায়লান! বিনা যুদ্ধে নাহি দিবেন সূচ্যগ্র জমি — পুরভোটের হাওয়ায় এমন রণংদেহী মেজাজেই ময়দানে নামলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়।