নন্দীগ্রাম। রাজ্য রাজনীতির মঞ্চে বাংলার এই স্থানটাই সবচেয়ে বেশি রঙের খেলা দেখেছে। সাক্ষী থেকেছে রঙবদলের। কৃষকদের লাল রক্তস্নাত যে জমিতে দাঁড়িয়ে একসময় তৃণমূলের ব্যানার হাতে লড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, আজ সেই মাটিতে তৃণমূলেরই ফ্লেক্স ব্যানারে শুভেন্দুর ছবি দিয়ে ‘মীরজাফর’ লেখা। ভাবা যায়!
শনিবার নন্দীগ্রামে এক জগদ্ধাত্রীপূজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে এই দৃশ্য দেখে একটু থমকালেও দমলেননা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। উল্টে সভামঞ্চে দাঁড়িয়েই বক্তব্য ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূলের উদ্দেশ্যে, “আমি জনপ্রতিনিধি, জাতধর্ম দেখিনা। কিছু লোক যারা ভয় পাচ্ছে, তারাও খরচ করছে, আমারই ছবি অন্যভাবে দিচ্ছে। তাদের অভিনন্দন জানাই”।
অর্থাৎ, ‘মীরজাফর’ লেখা ফ্লেক্সে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ছবিকেও নিজেরই একরকম প্রচার বলে ধরে নিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। শুধু জাতের উল্লেখ ছুঁয়ে হয়তো বলতে চেয়েছেন মীরজাফরের বদলে অন্য উদাহরণও দেওয়া যেত! ওদিকে শুভেন্দুর প্রত্যুত্তরে তৃণমূলের জেলা সংগঠক দেবপ্রসাদ মন্ডল বলেছেন, “মীরজাফর মীরজাফরই। মানুষ বুঝেছে শুভেন্দু কত বড় গদ্দার”।
নন্দীগ্রামের তারাচাঁদবাড়ে টাঙানো হয়েছে ওই ফ্লেক্স। অবশ্য এই প্রথম নয়, এর আগেও চলতি মাসের ১ তারিখে তেখালি অঞ্চলেও ওই একইরকম ‘মীরজাফর’ লেখা ফ্লেক্স দেখা গেছিল।
তরজা চলছে তখন থেকেই। এদিনের সভায় দাঁড়িয়ে নিজের নামে লেখা ওই ব্যানার সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাথায় বাঁধা রুমালের তুলনা টেনে কার্যত এক কথার গোলকধাঁধায় ফেলে দেন উপস্থিত জনগনকে।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিপক্ষে যোগ দেওয়া শুভেন্দুকে দাঁড় করিয়ে যে চালটা বিজেপি দিয়েছিল; মমতাকে হারিয়ে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে গেরুয়া শিবির তাতে সংশয় নেই।
উল্লেখ্য, এই শুভেন্দু অধিকারীই নন্দীগ্রামে একটা চলমান রাজনৈতিক ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন, বিজেপি দল নয় — এটা ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত। আর এই নন্দীগ্রামেই নিজের নামে ‘বিশ্বাসঘাতক’ লেখা ব্যানার ইতিহাসের পাতায় খানিকটা হলেও কালির ছাপ রেখে যাবে, বিশেষজ্ঞরাও অনেকটা তেমনই অনুমান করছেন।