হিন্দি ভাষায় সম্প্রচারিত ওয়েবসিরিজ ‘আশ্রম’ ভারতীয় ছবির দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ববি দেওল অভিনীত ‘আশ্রম’-এর দুটি সিজন রিলিজের পর, অনেকেই পরবর্তী সিজন দেখার অপেক্ষায়। এবার সেই ‘আশ্রম’ নিয়েই আপত্তি তুলল বজরং দল। হিন্দুত্বের অবমাননার অভিযোগ তুলে শ্যুটিং সেটে ঢুকে চলল তুমুল ভাঙচুুর। গত রবিবার মধ্যপ্রদেশে এই ঘটনা ঘটে।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালে চলছিল ‘আশ্রম সিজন-৩’ এর শ্যুটিং। সেখানে আচমকাই ঢুকে পড়ে বজরং দল। শ্যুটিংয়ের জিনিসপত্র সহ মেকআপ ভ্যান ও গাড়ি ভাঙচুর করে ছবির পরিচালক প্রকাশ ঝার মুখে কালি ছেটানো হয়। তারপর হুমকি দেওয়া হয় — ওয়েবসিরিজের নাম বদলাতে হবে। নাম বদল না হলে শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ছবি মুক্তির ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করা হবে।
অভিনেতা ববি দেওলকেও খুঁজেছিল হামলাকারীরা, তবে সঠিক মূহুর্তে তাঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলা হয়। ববিকে কেন খুঁজছিলেন? সেই প্রসঙ্গে বজরং দলের নেতা সুশীল বলেছেন, “ববির উচিত দাদা সানির থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া, যিনি একজন বিজেপি সাংসদ এবং একাধিক দেশপ্রেমের ছবি করেছেন”।
বজরং দলের অভিযোগ অনুযায়ী, “আশ্রম একটি ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। কোনো একটি আশ্রমে ঘটা অপরাধের জন্য পরিচালক সব আশ্রমের দুর্নাম করতে পারেননা। সুতরাং এই নাম বদলাতে হবে”।
ওই হামলার পর সুশীল জানান, প্রকাশ ঝা সিরিজের নাম বদলাতে রাজি হয়েছেন। বেশ, তবে এখানেই সব প্রশ্ন শেষ হয়ে যায় কি? চাপের মুখে নাম বদলালেও, এরপর যদি কোনো নির্দিষ্ট দল এসে হামলা করে চিত্রনাট্য বদলাতে বলেন, তাহলে কী করবেন পরিচালক? আশংকা থেকে যাচ্ছে, সিজন -৩ এর পর ‘আশ্রম-৪’ হলে হয়তো এমন কিছু ঘটতেই পারে! সিনেমা জগত থেকে দর্শকদের অনেকেই এমনটা মনে করছেন।
তাহলে বিতর্কের কারণটা গোড়া থেকে একটু বুঝে নেওয়া যাক। সিরিজ দেখতে দেখতে অনেকেরই মনে প্রশ্ন ছিল — আশ্রম উল্লিখিত এই বাবা নিরালা কি সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্র? এর প্রাথমিক উত্তর হবে ‘হ্যাঁ, ধারাবাহিক এই ওয়েব সিরিজের উক্ত ওই বাবা নিরালা এবং তার কার্যকলাপ সম্পূর্ণ কাল্পনিক’।
এবার বজরং দলের অভিযোগ অনুযায়ী জবাব দিতে গেলে বলতে হবে — না, ‘কোনো একটি আশ্রমে এমন অপরাধ মূলক ঘটনা’ ঘটেনি, এরকম একাধিক আশ্রমে ঘটা অপরাধ মূলক ঘটনার মিশেলেই গড়ে উঠেছে ‘বাবা নিরালা’ নামের এই চরিত্র।
বজরং দলের জ্ঞাতার্থে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’র এক রিপোর্ট জানাচ্ছে — এই চরিত্রের অনুসরণে রয়েছে একাধিক উদাহরণ যেমন — ২০১৭ সালে ধর্ষণ ও খুনে অভিযোগে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বাবা রাম রহিম ; ‘কৈলাশ’-খ্যাত ধর্ষণকারী বাবা নিত্যানন্দ ; আশ্রম বাপু (ওই এক অপরাধে অপরাধী); স্বামী বিকাশানন্দ যিনি শিশুকন্যাদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি বানাতে গিয়ে ধরা পড়েন; স্বামী ভীমানন্দ যিনি যৌন ব্যবসায়ে ৫০০ কোটি টাকা সমেত ধরা পড়েন ইত্যাদি।
আর কোনো নাম চাই? দর্শকমহল এমন অনেক খবরই রাখেন। তাদের প্রশ্ন বজরং দল কি উল্লিখিত এই ‘বাবা’দেরকেই ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী’ বোঝাতে চান? প্রকাশ ঝা ‘আশ্রম’ নাম বদলালেই ওই ঘটনাগুলো সব মিথ্যে হয়ে যায় কি?