ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আর্দ্র মুম্বইতেই গতকাল শরদ পাওয়ারের সাথে সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে অবশ্য তিনি ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এনসিপি প্রধানের সাথে ১ ঘন্টার নিভৃত বৈঠক সারেন।
এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বক্তব্যে তুলে ধরছিলেন বিজেপি বিরোধী শক্তিশালী ফ্রন্ট গঠনের কথা। আর ঠিক তখনই সম্ভবত বিভ্রান্তিবশত কোনও এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি ‘ইউপিএ’-র প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, “ইউপিএ! ইউপিএ বলে কিছু আছে নাকি? ”
ব্যস, এই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তৎক্ষণাৎ ভাইরাল হয়ে যায়। যার ফলে ধারালো প্রত্যুত্তর দিয়ে মমতাকে পাল্টা বিঁধলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সি কে ভেনুগোপাল।
ব্যাপারটা কিছুটা এইরকম — শরদ পাওয়ারের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “সারা দেশে আজ যে ফ্যাসীবাদি শাসন চলছে এর বিরুদ্ধে জোরালো বিকল্প শক্তি তৈরি করতে হবে। যেখানে যাদের যতটুকু শক্তি, তাদের মিলেমিশেই জোটবদ্ধ হতে হবে। শরদজি সিনিয়র লিডার, আমি তাঁর সাথে কথা বলেছি।”
এরপরই সাংবাদিকদের তরফে প্রশ্ন ছুটে আসে, “আপনার কি মনে হয়, শরদজি ইউপিএ -র সাথে যুক্ত হয়ে নেতৃত্ব দেবেন?”
এই প্রশ্নে হকচকিয়ে যান তৃণমূল নেত্রী। ফটাফট উত্তর দিয়ে বসেন, “কোথায় ইউপিএ?”
কথাটা শ্লেষাত্মক হয়ে গেছে বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির হাল ধরেন শরদ পাওয়ার। মমতার মুখের লাগাম কেড়ে নিয়ে নিজেই উত্তরে বোঝাতে চান , “বিজেপির বিরুদ্ধে একটা বিকল্প শক্তির কথা আমরা বলছি। বিজেপিকে রুখতে, সমমনস্ক দলগুলোকে একত্রিত করতে হবে।”
কিন্তু মমতার মুখের বাক্য ততক্ষণে কংগ্রেস শিবিরে তোলপাড় তুলে দিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম এএনআই-এর মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস নেতা ভেনুগোপাল বলেন, “কংগ্রেস ছাড়া বিজেপিকে হারানো স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতীয় রাজনীতির এই বাস্তব সত্যিটা সকলেই জানেন।”
মমতার তাৎক্ষণিক উত্তরে ইউপিএ-কে এককথায় উড়িয়ে দেওয়া একেবারে কংগ্রেসের মর্মে গিয়ে বিঁধেছে। তাই ভেনুগোপালের এই প্রত্যুত্তর। যাতে আরো একবার বিজেপি বিরোধী জোট প্রসঙ্গে কংগ্রেসের ভূমিকার কথা খুঁচিয়ে উঠল।
উল্লেখ্য, ইউপিএ (United Progressive Alliance) ২০০৪ সালের নির্বাচনের পরে মধ্য-বাম সংগঠনগুলোর সাথে মিলিত একটি জোট, যার নেতৃত্বে ছিল কংগ্রেস। নির্বাচনে কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এই ইউপিএ সরকার গঠিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে এই জোট বিজেপির (সাথে তৃণমূল কংগ্রেস) নেতৃত্বে এনডিএ জোটের কাছে ভোটে পরাজিত হয়।
তাই এনডিএ বোঝালে যেমন তৃণমূল বোঝায়না, তেমনই ইউপিএ বললেও কংগ্রেসকে বোঝায় কি? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের একাংশ এই প্রশ্নটি রাখতে চেয়েছেন। অবশ্য তাতে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্ক স্থাপনে কোনও পরিবর্তন আসবে কিনা সেটা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে।