অদূর ভবিষ্যতে ওয়াইফাইকে টেক্কা দিতে চলেছে আরও উন্নততর প্রযুক্তি’ লাইফাই ‘। এটা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পক্ষে একরকম সুখবর। কারণ তথ্য সম্প্রচারে এই প্রযুক্তি কাজে লাগলে আরও সহজ ও দ্রুত হয়ে যাবে তথ্য আদানপ্রদান।
কী এই লাইফাই?
লাইফাইয়ের সম্পূর্ণ নাম লাইট ফিডালিটি (Light Fidelity) – সংক্ষেপে Lifi.
ওয়াইফাইয়ের মতো এটিও একটি বেতার প্রযুক্তি। তবে ওয়াইফাইয়ের ক্ষেত্রে মাধ্যম হল সূক্ষ্ম বেতার তরঙ্গ, আর লাইফাইয়ের মাধ্যম হল আলো। আর, আলোর গতিবেগ যেহেতু বেশি, তাই ডেটা সম্প্রচার গতিও সেখানে অনেক তাড়াতাড়ি। যেমন ৪ জিবি একটি সিনেমা ডাউনলোড হয়ে যাবে পলক না ফেলতেই! তার জন্য খুঁজতে হবেনা নির্দিষ্ট কোনও ওয়াইফাই জোন, যেকোনো একটি স্ট্রিট লাইটের নিচে দাঁড়িয়েই সেটা সম্ভব হবে।
গবেষকরা সম্ভাবনা দেখছেন একটা সময়ে ঘরের আলো শুধু ঘরকেই আলোকিত করবেনা, নেটওয়ার্ক তৈরিতেও অংশ নেবে। যেখানে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করে কম্পিউটার, সেলফোন সংযোগ ঘটিয়ে তথ্য আদানপ্রদান করা যাবে অতি সহজেই।
২০১১ সালে জার্মান বিজ্ঞানি হ্যারল্ড হ্যাস এই লাইফাই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। আলাদা করে কোনো রাউটার ছাড়াই শুধুমাত্র একটা এলইডি আলোকে তরঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করে ট্রান্সমিশন সম্ভব, এটা তিনিই প্রথম দেখান। যেখানে এই প্রযুক্তির ডেটা সম্প্রচারের দ্রুততা ওয়াইফাইয়ের চেয়ে একশো গুণ বেশি। সর্বাধিক ক্ষমতা হিসেবে প্রতি সেকেন্ডে এই আলোক মাধ্যমে ২২৪ জিবি পর্যন্ত তথ্য পাঠানো সম্ভব।
তবে এর একটাই সীমাবদ্ধতা আছে।
আলোকতরঙ্গ দেয়াল ভেদ না করতে পারার ফলে আলো যেখানে রয়েছে সে জায়গা ছেড়ে গেলেই ডিসকানেক্টেড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তা যেমন রয়েছে, অপরদিকে এই ত্রুটিকেই তথ্য সম্প্রচারের সবচেয়ে সুরক্ষিত দিক বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
সীমিত জায়গায় ব্যবহার করার ফলে তথ্য ফাঁস বা পাসওয়ার্ড হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনাও অনেক কমে যাবে।
এখানে ঠিক যেন প্রকৃতি নিজেই প্রযুক্তিকে সুরক্ষার ভার নিয়েছে। তাই ব্যাপক প্রয়োগ কিন্তু সীমিত পরিসরে, সুরক্ষা বজায় রেখে – এমনটাই ইঙ্গিত করেছেন ওই প্রযুক্তিবিদরা।
আলোকে সংকেতে রূপান্তরিত করে দ্রুত প্রেরণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে অনেক জায়গাতেই। আমাদের এখানেও প্রয়োগ হতে হয়তো খুব বেশি দেরি নেই, যখন রাস্তা, দোকান, ঘরের আলোয় আলোয় ছড়িয়ে পড়বে তথ্য সংকেতের কানাকানি।