মঙ্গলবার অতর্কিতে জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হল জম্মু-কাশ্মীর। মৃত ৩ নিরপরাধ ব্যক্তি। যার মধ্যে একজন শ্রীনগরের বিখ্যাত ওষুধের দোকান ‘বিন্দ্রু মেডিকেট’-এর মালিক মাখনলাল বিন্দ্রু। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছে তাঁকে।
এর ঠিক এক ঘন্টার মধ্যেই কাশ্মীরের আরো দুটি জায়গায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। গুলিতে নিহত হন হাওয়ালের এক স্থানীয় ভেলপুরি বিক্রেতা বীরেন্দর। অপর হামলাটি হয়েছে বন্দিপোখরায়। বন্দিপোখরার নেদখাই অঞ্চলে এক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। জানা গেছে ওই ট্যাক্সি ড্রাইভারের নাম শাফি লোন।
একই দিনে পরপর তিনটি নিষ্ঠুর আক্রমনে ৩ জন নিরপরাধের মৃত্যুতে চাঞ্চল্যে কাশ্মীর। এই ঘটনা আরো একবার দেখিয়ে দিল সন্ত্রাসের কোনো জাত ধর্ম হয়না। নিরস্ত্র ওই মানুষগুলোর রক্তে মানবতা লজ্জিত হল আবার। আতঙ্কিত হল কাশ্মীর।
মৃত মাখনলাল বিন্দ্রুর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। এই বৃদ্ধ কাশ্মীরি পন্ডিত এই বয়সেও নিয়মিত ওষুধের দোকান সামলাতেন। অন্যদিনের মতোই কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলিতে আচমকাই লুটিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃতের পরিবারের তরফে গর্জে উঠেছেন মাখনলালের মেয়ে ডক্টর সমৃদ্ধি বিন্দ্রু। বাবার মৃত্যু বুকে বিঁধলেও ভেঙে পড়েননি তিনি, উল্টে প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন জঙ্গিদের লক্ষ্য করে। বলেছেন , “হিম্মত হ্যায় তো মেরে সামনে আ!(ক্ষমতা থাকলে আমার সামনে এসে দেখা)”। বলেছেন,”আমি হিন্দু, আমি কোরান পড়েছি। কোরান বলছে এই শরীরের শুধু মৃত্যু হয়, আত্মার হয়না! আমার বাবা কাশ্মীরি পন্ডিত মাখনলাল বিন্দ্রু কখনো মরবেননা “– এভাবেই নিজের ‘হিম্মত’এর মাধ্যমে মৃত বাবার আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি। প্রকাশ্যেই জঙ্গিদের ডাক দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন সাহসের আগুন কাকে বলে!
এ লড়াই শুধু সমৃদ্ধি বিন্দ্রুর একতলার লড়াই নয়। নিরস্ত্র নিরপরাধ এক বৃদ্ধকে কর্মরত অবস্থায় যারা বিনা কারণেই হত্যা করে গেল, নির্দোষ এক ভেলপুরি বিক্রেতা আর সাধারণ ট্যাক্সি ড্রাইভারকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেল যারা — তারা আসলে মানবতার শত্রু। মাখনলাল বিন্দ্রুর মেয়ে ডক্টর সমৃদ্ধি নিজের প্রতিবাদের মাধ্যমে আজ মানবতাকেই ডাক দিয়েছেন।