সম্প্রতি রাজ্যপালের সাথে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের বিবাদ চরমে উঠেছে। নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো ইস্যু তৈরি করে রাজ্যসরকারকে অসহযোগের মনোভাব দেখাচ্ছেন, এমনকি অধিকার বহির্ভূত ভাবেই হস্তক্ষেপ করছেন, এমনটাই তৃণমূল সরকারের অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সাথে ঝামেলা তীব্র আকার ধারণ করেছিল গত সপ্তাহেই। আর তার প্রতিক্রিয়াতেই ব্রাত্য বসু একটি ট্যুইট করেছেন, যেখানে সুকুমার রায়ের পদ্য ‘লড়াই ক্ষ্যাপা’ থেকে কয়েকটি লাইন তুলে ধরা হয়েছে পাগলা জগাই চরিত্রটিকে সামনে রেখে। তবে পংক্তিগুলোর শীর্ষে ব্রাত্য বসু লিখেছেন ‘প্রসঙ্গ : অনুমোদন’। সুকুমার রায়ের লাইনগুলির কিছু অংশ এইরকম — ওই আমাদের পাগলা জগাই নিত্যদিনের হেথায় আসে/আপনমনে গুনগুনিয়ে মুচকি মুচকি হাসে……../চেঁচিয়ে বলে ফাঁদ পেতেছ জগাই কি তায় পড়ে?/ সাত জার্মান জগাই একা তবুও জগাই লড়ে।
নাম ভূমিকায় ‘প্রসঙ্গ: অনুমোদন’ লিখে এই ছত্রগুলির দ্বারা ব্রাত্য বসু কাকে ইঙ্গিত করেছেন, এটা বুঝতে একটুও কারুর অসুবিধা হয়নি। সংযোগ আরো একটু স্পষ্ট হবে এই তথ্যে –দার্জিলিং থেকে বৃহস্পতিবার একটি ট্যুইটে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় একটি তালিকা পেশ করে অভিযোগ তোলেন, “২৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে।”
তালিকায় কলকাতা, যাদবপুর, উত্তরবঙ্গ, আলিপুরদুয়ার প্রভৃতি নামও রয়েছে। রাজ্যপালের এই ট্যুইটের পরেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ‘পাগলা জগাই’ সম্বলিত ট্যুইট।
প্রসঙ্গত, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু একটি বৈঠকে সরাসরিই বলেছিলেন, “ঔপনিবেশিক রীতি মেনে রাজ্যপালকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার নিয়ম চালিয়ে যাওয়া উচিত, নাকি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের এই পদে মনোনীত করা যায় সেটা ভেবে দেখবার সময় এসেছে।” এপ্রসঙ্গে ব্রাত্য বসু আরো বলেছিলেন, “নিয়ম বদল করে অন্তর্বর্তীকালীন আচার্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীকে ওই পদে বসানো যায় কিনা, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য।”
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে যথারীতি চটে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে উনি রাজ্যপালই করে দিন!” সেই সুত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠকে তলব করলেও তাতে সাড়া দেননি কেউ। রাজ্যপাল এতেও ক্ষুব্ধ হন, এবং ট্যুইট করেই বলেন, “আইনের নয়, এরাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় শাসকের আইন প্রতিফলিত হচ্ছে।”
এরপরই রাজ্যপালের বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে, এবং তা ট্যুইটারে একের পর এক প্রকাশ করেই চলেছেন। রাজ্যপালের এই মনোভাবকেই অসহযোগ বলে মনে করছে রাজ্যসরকার ও শিক্ষামন্ত্রক। ব্রাত্য বসুর এই ট্যুইটে তারই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।