তিনি চট করে কোনো ইস্যুতে মুখ খোলেননা, এমনকি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানের কথাও প্রকাশ্যে বলেননা কোথাও — তাঁর কিছু শিল্পী ও রাজনৈতিক বন্ধুদের এমনই অভিযোগ। অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জী। এবার বাংলাদেশের অশান্তিকে কেন্দ্র করে মুখ খুললেন তিনিই। বিস্ফোরণ ঘটালেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ফেসবুক পোস্টের শুরুতেই নিজের তথাকথিত ইমেজ বজায় রেখেই স্বীকার করে নিয়েছেন “ফেসবুকে বড় একটা আসা হয়না, আজ এলাম”।
উৎসবের দিনগুলোয় বাংলাদেশে কিছু মৌলবাদীদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত তান্ডব, কোরান ও দু্র্গাপ্রতিমার পাশে হনুমান মূর্তিকে ব্যবহার করে হিন্দু – মুসলিম উভয়ের মধ্যে অসম্প্রীতির যে ছবি সকলে দেখে চলেছেন তা যে টলিউডের এই ব্যস্ত অভিনেতা পরিচালকের দৃষ্টি এড়ায়নি সেটা উল্লেখ করেছেন।
এরপরই নিজের বক্তব্যের স্রোত খুলে দিয়েছেন পরম। নিজেকে উদাহরণ হিসেবে রেখে বলছেন, “আমাকে যে ছেলেটি শুটে অ্যাটেন্ড করে, আমার স্পটবয় তার নাম সামসের গাজী। পূজোর পাঁচদিন আমায়… শুভ ষষ্ঠী থেকে শুভ বিজয়া জানায়, প্রতিবারই। এবারো জানিয়েছে। সরস্বতী পূজোর দিনক্ষণ আমার মনে না থাকলেও ওর মনে থাকে আমাকে ওই মনে করিয়ে দেয়…”।
নিজের সাথে সম্পর্কিত সামসের গাজী থেকে শুরু করে কাঠের মিস্ত্রী সানোয়ার আলী, প্রত্যেকের যাপনের গল্প শুনিয়েছেন পরমব্রত। গল্প নয়, এসবই সত্যিকারের যাপন কথা। ধর্মে মুসলিম বা হিন্দু হলেই যে ছাপ্পা মারার অভ্যেস তার বিপরীতে সম্প্রীতির এক আশ্চর্য বয়ান রেখেছেন পরমব্রত চ্যাটার্জী।
“…বাংলাদেশে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা তুলে ধরে বিদ্বেষ সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে এটা বলতে থাকা উস্কানি ছাড়া কিছু নয়। এই ঘটনাগুলি থেকে যদি প্রমাণ হয় বাংলাদেশে হিন্দুরা বিপন্ন তাহলে গত সাত বছরে এরকম অগুনতি ঘটনা ঘটে গেছে এবং ঘটে চলেছে, যেগুলি নিয়ে দেশনেতারা অভূতপূর্ব ভাবে চুপ থেকেছেন, যেগুলো থেকে আরও সহজে প্রমাণ হয় যে ভারতে মুসলিমরা বিপন্ন”। এভাবেই সময়কে ছুঁয়ে, ইতিহাসকে ছুঁয়ে সম্প্রীতির কথা বলতে বলতে এগিয়েছেন অভিনেতা পরম।
মৌলবাদ, গোঁড়ামি যে সব ধর্মের অসম্প্রীতির জড়, সেকথা প্রাঞ্জল ভাষায় মনে করিয়ে বাংলাদেশের বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রেখেছেন পরম,–” কুমিল্লা বা নোয়াখালীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার নিন্দা করুন দ্বিধা না রেখে, দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করুন …”
এই শাস্তির দাবি যে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি নয়, ‘মৌলবাদের’ বিরুদ্ধে, তা বলাই বাহুল্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপের প্রশংসা করে পরমব্রত ভারতবর্ষের গোঁড়া হিন্দুদের দিকে তীর ছুঁড়ে বলেছেন, “এই ঘটনাগুলো সীমানার এপারের গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীদের সুযোগ করে দেয়”।
যথার্থই বাংলাদেশের ওই ঘটনার পর কিছু নেতা যে বারবার বিচ্ছিন্ন ঘটনা টেনে জুড়ে আপনমনে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে সুবিধা পেয়ে গেছেন তার চরম নিন্দা করেছেন পরম”।
আরো আছে। পরমব্রতর করা সম্পূর্ণ পোস্টখানা পড়লে সম্ভবত ধর্মীয় সম্প্রীতি কাকে বলে সেটা যেকোনো স্পর্শকাতর মনেই ছুঁয়ে যাবে। অবশ্য তার বিপরীতে এজন্য যে কিছু তিরস্কার বা ‘খিস্তি’ প্রাপ্য হবে সেকথাও জানাতে ভোলেননি পরমব্রত।