হাজারো ঝুটঝামেলা, কূটনীতিক চাল, হামলাবাজির পাশাপাশি শুক্রবার অভূতপূর্ব এক নাটক দেখল ত্রিপুরা। অনেকে বলছেন, এই দৃশ্য নাকি টেলি সিরিয়ালের স্ক্রিপ্টকেও হার মানিয়ে দিয়েছে!
দৃশ্যটা ভাবুন। বাবুল সুপ্রিয় নেমেছেন আসন্ন পুরভোটে তৃণমূলের প্রচারে; আর সে সময়ে একটা টেম্পো এসে ধুমধামাকা মাইক বাজিয়ে তাঁর সামনে তাঁরই গান বাজিয়ে দিল–“এই তৃণমূল আর না, আর না!”
ত্রিপুরায় শুক্রবারের সন্ধ্যায় ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান খাটিয়ে ঠিক এই কান্ডটাই ঘটাল বিজেপি।
শুক্রবার ত্রিপুরায় পৌঁছেই কর্মসূচী পালনে নেমে পড়েছেন ‘প্রাক্তন’ বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এখন ‘দিদির’ অন্যতম সেনা অধিনায়ক তিনি। তৃণমূলের প্রচার চালাচ্ছিলেন আগরতলার দূর্গা চৌমুহনীতে। সঙ্গে ছিলেন সুস্মিতা দেব, সায়নী ঘোষ, সুবল ভৌমিক সহ নেতাকর্মীবৃন্দ। চৌমুহনীতে পথসভা শুরু হয়েছে।
সভামঞ্চে বক্তৃতা দিতে শুরু করেছেন সায়নী ঘোষ, ঠিক তখনই এক টেম্পোয় অনেকগুলো স্পিকার লাগিয়ে সামনে দিয়ে যাচ্ছিল বিজেপির প্রচার গাড়ি। হাই ভল্যুমে বাজছিল বাবুল সুপ্রিয়রই গান –“এই তৃণমূল আর না! আর না!”
প্রচার গাড়িটা গান চালানো অবস্থায় ইচ্ছে করেই থেমে দাঁড়ায়। সায়নী ঘোষ থমকে গেছেন, কিন্তু সেটা ভাঙছেননা। বললেন, “আরে! এই গাড়ি এখানে কী করছে? যাই হোক, বাজাও বাজাও! মানুষ আমাদের সাথেই আছে”।
এইবার বাবুল উঠে সায়নীর হাত থেকে মাইক তুলে নেন নিজের হাতে। শাসকদলের গানের গাড়িকে পরোক্ষে লক্ষ্য করে জনগণকে বলতে থাকেন, “সায়নী খুব জোশের সাথে কথা বলে। আপনারা সবাই আমার মতোই ওঁর কথা শুনবেন। আমরা ‘গ্রাসরুট’ থেকে উঠে এসেছি, ভালো লাগছে, পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারছি। আপনারাই ভেবে দেখুন, কত অহঙ্কার থাকলে বা বড় বড় নেতারা দলের কর্মীদের সাথে কতটা দুর্ব্যবহার করলে এমনটা হয়! যে ছেলেটা এই গান তৈরি করেছিল, আজ সে-ই ওই দলটা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। দিদির সাথে তৃণমূলে চলে এসেছে”।
বলতে গিয়ে কন্ঠ নাকি খানিক রুদ্ধ হয়ে আসছিল বাবুলের, তবুও দমেননা তিনি। তাঁর ওপর প্রয়োগ করা অস্ত্রকে নিজেরই প্রচারের হাতিয়ার করে তোলেন। এরপরই বাবুল ফাংশন মঞ্চের জনতাকে চমকে দেওয়ার মতোই চেঁচিয়ে বলেন, “জানিনা বেশি এক্সারসাইজ করলে কী হয়। মাথায় মাসল গজায়? আমার গান আমারই সামনে বাজাচ্ছে! আরে ভাই ম্যায়নে একবার জো কমিটমেন্ট কর দিয়া, উসকে বাদ ম্যায় খুদ কা ভি নেহি শুনতা হু! এই গানটাও আমি শুনছিনা। আমি তৃণমূলের হয়ে আরও ভালো গান বানাবো। বাজা ভাই , তোরা আরো ৬ বার এই গানটা বাজা!”
বাবুলের এই স্টেজ কাঁপানো উল্লসিত চিৎকারে উপস্থিত জনতাও হাততালি সিটিতে আসর মাত করে দেন।
যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিলেন বাবুল তা সত্যিই প্রশংশনীয়। এরপরেও একদল নিন্দুক আড়ালে টিপ্পনী কেটে বেড়াচ্ছেন, মাথায় মাসল গজালে এমনই হয়।