গতকাল গুরুনানক জয়ন্তীর দিন বহু বিতর্কিত ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে দেশবাসীর নিকট ভাষণে যতই তিনি বিচারশীল ভাবোদয়ের মনোভাবই দেখান না কেন, আন্দোলনকারী বাম সংগঠনগুলি মনে করছে লাগাতার কৃষক আন্দোলনের ভয়েই পিছপা হয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষি আন্দোলনের বিজয় উদযাপন শুরু হয়ে গেছিল গতকাল। বাদ যায়নি বাংলাও। নদীয়া, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট প্রভৃতি জায়গায় মিছিল বের করেছিল বাম সংগঠন। সিপিআইএম, এসইউসিআই সহ সমস্ত আন্দোলনকারী দলগুলোর কাছে এই জয় যেকোনও নির্বাচন জয়েরই সমতুল্য, এমন ছবিই দেখা গিয়েছে। তবে মোদীর ৩ কৃষিআইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে মহত্ত্বর অভিসন্ধি বিরাট কিছু দেখতে রাজি নয় বামেরা। তাঁরা এটাকে আন্দোলনে জেতার প্রথম ধাপ হিসেবেই দেখছেন।
সিপিআইএমের কৃষক সংগঠনের নদীয়া জেলার সম্পাদক মেঘলাল সাহা বলেন, “৩ টি কালা আইন বাতিলের পাশাপাশি ফসলের দামবৃদ্ধি রোখার মতো আরো কয়েকটি দাবি করেছিলাম আমরা। এখন বাকি দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ না কেন্দ্র সরকার সেটা মেনে নিতে বাধ্য না হচ্ছে”।
এদিন রানাঘাটের চৌরঙ্গী মোড়ে ‘বিশ্বের বৃহত্তম কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয়’– শীর্ষনাম দিয়ে বিশাল বিজয় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কল্যাণী ব্লক কমিটির আহ্বানে মদনপুর বাজারে বিজয় মিছিল বের করা হয়।
উল্লেখ্য, দিল্লীর রাজপথে একবছর ব্যাপী এই বৃহত্তর কৃষক অবস্থানের সবচেয়ে ব্যাপক প্রভাব দেখা গেছিল নদীয়ায়। জেলার সমস্ত বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলি তাদের রাজনৈতিক ব্যানার সরিয়ে রেখে ‘কৃষক সংহতি মঞ্চে’ এসে এককাট্টা হয়। এই সংহতি মঞ্চের নেতৃত্বে দেবগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে নাগরিকদের ধর্না চলে দীর্ঘ ৪৩ দিন। স্বাভাবিক ভাবেই গতকালের কৃষি আইন প্রত্যাহারের সুখবরে চাঞ্চল্যও ছড়ায় ব্যাপকভাবে।
উল্টোদিকে, নরেন্দ্র মোদীর এই আকস্মিক ঘোষণায় রীতিমতো অপ্রস্তুত বিজেপি। উক্ত জেলার এক বিজেপি নেতা জানান, “আগে থেকে কোনও প্রস্তুতি ছিলনা আমাদের। দলের অবস্থান কী হবে তাও এখনও নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়নি। ফলে আমরা চুপ করেই আছি”।
বিজেপির বেশিরভাগ নেতাই চুপ থাকলেও, ভীষণ চেষ্টা করেও একেবারে চুপ থাকতে পারেননি দিলীপ ঘোষ। কালীগঞ্জের এক দলীয় সভায় এসে সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল — আসন্ন নির্বাচনের কথা ভেবেই কি মোদীজির এই সিদ্ধান্ত? উত্তরে তিনি বলেন, “ভোটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ভোট দেখে আইন হয়নি, তাই ভোটের জন্য আইন প্রত্যাহারও করা হয়নি। সরকার আইন পরিবর্তন করার চেষ্টা করছিল। যেহেতু টানা বিরোধিতা চলছিল, তাই সরকার এটা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”।
আর দিলীপ বাবুর এই কথাতেই সিঁদুুুরে মেঘের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ‘স্থগিত’! পুরোপুরি ‘প্রত্যাহার’ নয় কি তাহলে? প্রসঙ্গত, প্রকাশ পর্বের দিন ‘তপস্যার ঘাটতি’ বলে প্রধানমন্ত্রীও প্রত্যাহারের ঘোষণার সময় একটি ‘আপাতত’ শব্দ জুড়ে রেখেছিলেন।
ফলে সিদ্ধান্ত যাই হোক, আন্দোলন জিইয়ে রাখারই পক্ষেই মত দিচ্ছেন বাম সংগঠকরা। ‘কৃষক সংহতি মঞ্চের’ আহ্বায়ক শেষাদ্রী রায় স্পষ্টতই বলেছেন, “বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে সর্বগ্রাসী ফ্যাসিস্ট কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, তারই একটা অংশ ছিল কৃষি আইন। সেই কৃষি আইন প্রত্যাহার দেখিয়ে দিল যে, সুসংগঠিত ও দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে যে কোনও আগ্রাসন রুখে দেওয়া যায়”।